দুই বাংলার দুই প্রিয় কণ্ঠশিল্পী মৌসুমী ভৌমিক ও আনুশেহ আনাদিল দ্বৈত কণ্ঠে গাইলেন ‘গাছ’ শিরোনামের একটি গান। গত সোমবার
ইউটিউবে প্রকাশিত হয় গানটি। দুই বাংলার যৌথ উদ্যোগে নতুন করে গানটি ধারণ ও প্রকাশ করা হয়েছে।
২০১৭ সালে প্রকাশিত মৌসুমী ভৌমিকের সবশেষ অ্যালবাম সংস ফ্রম টোয়েন্টিসিক্স-এইচ-এর অন্যতম গান ‘গাছ’। নিজের লেখা ও
সুর করা এ গান বহুবার বহু জায়গায় গেয়েছেন তিনি। করোনা মহামারির এই সময়ে ঘরে বসে আবার নতুন করে গানটির অডিও-ভিডিও ধারণ করা হয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দুই দল শিল্পী-কলাকুশলীর তত্ত্বাবধানে নতুন করে গানটি ধারণ ও ভিডিও চিত্র তৈরি করা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য তহবিল সংগ্রহের একটি উদ্যোগের অংশ হিসেবে প্রকাশিত হয় গানটি। দ্য ট্রাভেলিং আর্কাইভের ইউটিউব চ্যানেলে গানটি দেখা যাবে। ভিডিওটি নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের অ্যাপলবক্স। গানটি নিয়ে কথা বললেন দুই শিল্পী।
আনুশেহ আনাদিল
‘গাছ’ গানটা গেয়ে কেমন লাগল?
করোনা মহামারিতে আমার বাড়ির গাছগুলোর সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক জেগেছে। তাদের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে মনে হয়, তারাও আমার সঙ্গে কথা বলে। আমরা প্রকৃতি থেকে কতটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি, সেটা নতুন করে অনুভব করছি। মৌসুমীদির এই গানটাই আমার কাছে একটা গাছের মতো। গানটা গাওয়ার সময় সেটাই মনে হচ্ছিল…যেন আমার পায়ের নিচ থেকে শিকড় বেরিয়ে মাটিকে আঁকড়ে আছে। আর শির থেকে পাতাগুলো আলো স্পর্শ করার আনন্দে নাচছে।
ভিডিওটা আপনাদের আইডিয়ায় তৈরি?
ভিডিওটা বানিয়েছে অ্যাপলবক্সের মোজতবা জাহিদ। সাদাকালোর আইডিয়াটা আমাদের। কিন্তু এতটা আর্টিস্টিক হয়েছে তার কারণেই।
গানটা থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
মনে হচ্ছে সবাই আমাদের মতোই গানটাকে অনুভব করছে। আমরা যারা গান করি, কাঁটাতারের সীমান্তরেখা তাদের কখনোই আলাদা করতে পারেনি। রবীন্দ্রনাথের কথায় ‘যারা কথা ছেড়ে বাজায় শুধু সুর, তাদের সবার সুরে সবাই মেলে নিকট হতে দূর।’
মৌসুমী ভৌমিকের সঙ্গে গেয়ে কেমন লাগল?
তাঁর সঙ্গে কিন্তু আমার অনেক দিনের সখ্য। তাঁর বাড়িতেই প্রথম ‘গাছ’ গানটি শুনেছিলাম। আমার ছেলে যখন কলকাতায় থাকত, তিনি সব সময় তার খোঁজ নিতেন। তাঁর সঙ্গে কখনো এভাবে গাইতে পারব, সেটা আমি কখনোই ভাবিনি। তাঁর সঙ্গে গান করে খুব ভালো লেগেছে। আমার খুব প্রিয় শিল্পী তিনি।
মৌসুমী ভৌমিক
আনুশেহর সঙ্গে দ্বৈত কণ্ঠে গানটা করলেন কেন?
হঠাৎ সেদিন প্রথম আলোর ঘরে বসে গান অনুষ্ঠানে তাকে অনেক দিন পর গাইতে শুনলাম। ‘ধরার গান’টা ভালো লাগল। তার গান আমার খুবই ভালো লাগে। আমি তাকে মেসেজ পাঠালাম। সে উত্তর দিল, ‘গাছ’ গানটা শুনতে চাইল। আমি তাকে পাঠালাম। ভাবলাম দুজনে মিলে আবার গাই।
এই সময়ে এই গান বেছে নেওয়ার কারণ কী?
এই সময়ে গানটি প্রকাশের একটি অন্য তাৎপর্য আছে। আমরা এমন এক অস্থির সময়ে বাস করছি, যখন আমাদের পায়ের নিচে মাটি থাকছে না। অথচ জীবনের প্রতীক গাছ আকাশের দিকে হাত বাড়িয়ে মাটিকে বেঁধে রাখছে। অন্য একটি দিক থেকে যদি আমরা দেখি যে আমরা যেভাবে প্রকৃতির ক্ষয়ক্ষতি করছি, সেটা আমাদেরই ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
গানটা কত আগের?
‘গাছ’ গানটার বয়স ২০-২৫ বছর। গান হতে অনেক সময় লাগে, ধীরে ধীরে হয়। আমরা যেটা গাইলাম, সেটা নতুনই। কেননা, একটা গান হয়ে উঠতে অনেক সময় লাগে। গানটা নানা সময়ে আমি নানাভাবে গেয়েছি। কলকাতায়, কলকাতার বাইরে, এমনকি ঢাকাতেও গেয়েছি।
তারপর এটা তৈরির নেপথ্যের ঘটনাটা বলবেন শ্রোতাদের?
আমি গানটা পাঠানোর পর সে খুব সুন্দর করে হারমোনাইজ করল। দুজনে গাইলাম। সুন্দর একটা ভিডিও করল। ব্যস, এক সপ্তাহের মধ্যে সেটা নতুন একটা গান হয়ে গেল। গত সোমবার পশ্চিমবঙ্গে একটা ইভেন্ট ছিল। গ্লোবাল জাস্টিস রেবেলিয়ন নামে একটা গ্রুপ আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য তহবিল সংগ্রহের আয়োজন করেছিল। আমার ছেলে অরণ্য আর্জান সেটার সঙ্গে জড়িত। সে কারণে আমরা সেদিনই ভিডিওটা প্রকাশ করতে চেয়েছি।
[ad_2]
Source link