একটি অপমানসূচক শব্দ যেভাবে বিশ্বজয়ী বানিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে

[ad_1]

ট্রেন্টব্রিজে প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে টনি গ্রেগের স্টাম্প ওড়ালেন অ্যান্ডি রবার্টস। গোটা সিরিজেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের নিশানা ছিলেন গ্রেগ। ছবি: টুইটার


ভদ্রলোকের খেলা ক্রিকেটে বর্ণবাদ আগেও ছিল। ১৯৭৬ সালে ইংল্যান্ড সফরে প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়ক টনি গ্রেগের মুখ থেকে বের হওয়া একটি শব্দে প্রচণ্ড অপমাণিত হয়েছিল পুরো ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। ওই ঘটনা বিশ্বজয়ী হতে অনুপ্রেরণা জোগায় ক্যারিবীয়দের


১৯৭৬ সালের ১ জুন। পরের দিন শুরু হবে ইংল্যান্ড–ওয়েস্ট ইন্ডিজের পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট। ট্রেন্ট ব্রিজের সেই ম্যাচের আগের দিন হোটেলের লাউঞ্জে আরাম করছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটাররা।


টেলিভিশন চলছিল তবে সেদিকে কারও তেমন কোনো মনোযোগ ছিল না। কিন্তু টিভি পর্দায় একটি মুখ ভেসে উঠতেই সবাই মনোযোগ দিতে বাধ্য হলেন। মুখটা যে প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড দলের অধিনায়ক টনি গ্রেগের। তারওপর নিচে লেখা 'ব্রেকিং নিউজ'।



কী ছিল সেদিনের সেই ব্রেকিং নিউজে, কয়েক বছর পর তা বলছিলেন ভিভ রিচার্ডস। ওই দিনের ঘটনা এখনো ভোলেননি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান। ভুলবেনই বা কীভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৭০ ও ৮০–এর দশকে ক্রিকেটে রাজত্ব করেছে তার পেছনে ওই ব্রেকিং নিউজও যে বড় ভূমিকা রেখেছে।



কী হয়েছিল শোনা যাক ভিভের মুখ থেকেই, 'একটু পরেই ছিল টিম মিটিং। পরের দিনের ম্যাচে কী কৌশল নেব আমরা তা নিয়েই আলোচনা হওয়া কথা ছিল। আর তখনই ওই ''ব্রেকিং নিউজ''। টনি গ্রেগ কিছু একটা বলবেন তাই আমরা যার যার আসনে বসে রইলাম সে কি বলে তা শুনতে।'



গ্রেগ যা বললেন তাতে ক্যারিবীয় ও বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসই বদলে গেল। অনেক পরে রিচার্ডস গ্রেগের দক্ষিণ আফ্রিকান উচ্চারণভঙ্গি অনুকরণ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে শুনিয়েছিলেন কী বলেছিলেন গ্রেগ, '''ব্রায়ান (ক্লোজি) ও আরও কিছু সতীর্থের সাহায্যে আমরা উইন্ডিজকে গ্রোভেল (কারও পায়ে পড়ে কিংবা মাটিতে মুখ গুজে ক্ষমা চাওয়া) করতে বাধ্য করব। আমরা করবই। ওয়াও!'''



রিচার্ডস স্বীকার করেন সেদিন তিনি 'গ্রোভেল' শব্দটার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারেননি। এই শব্দে যে বর্ণবাদের গন্ধ আছে সেটিও বুঝতে পারেননি তিনি। অভিধান খুলে নাকি সেদিন শব্দটা খুঁজে পাননি রিচার্ডস। তবে সঙ্গে থাকা সিনিয়র সতীর্থদের মুখ ভার দেখেই বুঝে গিয়েছিলেন ব্যাপারটা গুরুতর, 'একেকজন মুখের যে অবস্থা হয়েছিল। সবাই মনে হলো ভেঙে পড়েছে। তাঁদের মনে হয়েছিল ওই শব্দটার উচ্চারণ ব্যক্তিগত আক্রমণের সামিল। আমাদের এটাকে অপমান মনে হয়েছিল কারণ গ্রেগ এসেছেন বর্ণবাদী দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। যে দেশে গায়ের রংয়ের কারণে কালো মানুষেরা খুব বাজে অবস্থায় ছিল। তাই একজন দক্ষিণ আফ্রিকানের মুখ থেকে গ্রোভেলের মতো শব্দ শুনে আমরা দুঃখ পেয়েছিলাম।'



এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা টেলিভিশন বন্ধ করে মিটিংয়ে যায়। ভিভ স্মরণ করলেন যে মিটিংয়ে নাকি একটি শব্দও উচ্চারিত হয়নি, 'আমার মনে আছে কেউ একজন অধিনায়ক ক্লাইভকে (লয়েড) জিজ্ঞেস করলেন, ''মিটিং কি হবে না?''। তিনি (লয়েড) উত্তর দিলেন, ''না, মিটিং শেষ'''।



এই ঘটনাকে ব্যক্তিগত অপমান হিসেবে নিয়েছিল ক্যারিবীয়রা। আর তাতে ভেঙে না পড়ে উল্টো তেতে উঠেছিলেন তাঁরা। ভিভের কথাই ধরা যাক। ওই সিরিজে সাত ইনিংসে ইংলিশ বোলারদের কাঁদিয়ে ৮২৯ রান করেছিলেন। যার মধ্যে দুটি ডাবল সেঞ্চুরিও ছিল। বিশ্ব ক্রিকেট ভিভের নির্মমতার প্রথম সাক্ষী ওই সিরিজটাই।



শুধু ভিভ কেন প্রতিটি ক্যারিবীয় খেলোয়াড়ই গ্রেগকে দেখে নেওয়ার পণ করেছিলেন। ভিভ জানালেন যখনই গ্রেগ ব্যাটিংয়ে এসেছেন তাঁদের বোলাররা ফুল লেংথ বল করে গ্রেগের স্টাম্প উড়িয়ে দিয়েছে।



শুধু গ্রেগ কেন, ক্যারিবীয়রা পুরো ক্রিকেট বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে চেয়েছে সময় বদলে গেছে। আর ওই সিরিজে ক্যারিবীয়দের দাপটে উল্টো গ্রেগেরই পায়ে পড়ে মাফ চাওয়ার জোগার! দল বেঁধে মাঠে আসা ক্যারিবীয় দর্শকরাও মজা পেয়ে গিয়েছিলেন। যখন কোনো ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান চার মেরেছেন দর্শকেরা গ্রেগকে উদ্দেশ্য করে শোর তুলেছে 'গ্রোভেল, গ্রোভেল'। ব্রিটেনে ঘাঁটি গাড়া এক জ্যমাইকান গায়ক এজেকে তো 'কে এখন পায়ে পড়ছে?' নামের একটি গানও রেকর্ড করে ফেলেন।



ওভালে সিরিজের শেষ টেস্টে দর্শকদের দাবির মুখে টনি গ্রেগ আক্ষরিক অর্থেই মাটিতে মুখ গুজেছিলেন। দর্শকরাও তাতে বেশ মজা পেয়েছিলেন।



প্রচণ্ড অপমানিত হওয়া ক্যারিবীয়রা এরপর এর শোধ তুলেছে প্রায় দুই দশক রাজত্ব করে।



[ad_2]

Source link
IRFAN H

Hi, This is IrfanH I love to travel and passing by gossip with friends.

Post a Comment

Please do not enter any spam link in the comment box

Previous Post Next Post
);