এখন দেশে কোভিড-১৯–এর টেস্ট বাড়ছে, বাড়ছে শনাক্তের সংখ্যা। পাশাপাশি মৃত্যুহারও বাড়ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অঞ্চলভিত্তিক লকডাউন (অবরুদ্ধ) হচ্ছে এটা খুব ভালো কথা। ‘রেড জোন’ বলে আমরা যে জায়গা চিহ্নিত করেছি, সেখানে সংক্রমণটাকে কমাতে হবে। রোগকে সেখানেই সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করতে হবে। আর সেখানেও টেস্ট (পরীক্ষা) বাড়াতে হবে।
ঢাকায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হয়েছে। ছড়িয়ে পড়েছে চট্টগ্রামেও। রাজধানীতে জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক বেশি। এটার জন্য করোনা তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়তে পারে। করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার সক্ষমতা অনেক বেশি।
দেশে এই রোগের পরীক্ষা আগের চেয়ে বেড়েছে। কিন্তু আরও বাড়াতে হবে। যাদের টেস্টে পজিটিভ আসবে, তাদের উপসর্গ থাকুক আর না থাকুক— উভয়ের ব্যাপারেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। উপসর্গ যার আছে তাকে তো আলাদা করে রাখতেই হবে, যার নেই তাকেও রাখতে হবে। যার উপসর্গ নেই, তারও সক্ষমতা আছে ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়ার। এটি নিয়ে আমরা বেশি চিন্তিত। বিশ্বের প্রায় সব জায়গায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ মানুষের রোগের কোনো উপসর্গ নেই। এসব উপসর্গহীন ব্যক্তিকে নজরদারির আওতায় আনতে হবে, তারা যেন অন্যকে সংক্রমিত না করে। এটা দ্রুত একজন থেকে আরেকজনে ছড়াতে পারে। বাংলাদেশে সব বয়সী মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ঘটেছে। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে সংক্রমণ বেশি দেখছি। তাই আমাদের খুব সাবধানে থাকতে হবে। কোভিড-১৯–এর টিকা আসার আগ পর্যন্ত খুব বেশি সাবধানে থাকতে হবে।
হার্ড ইমিউনিটি (বেশি মানুষ আক্রান্ত হবে, বেশি অ্যান্টিবডি তৈরি হবে) আমাদের হচ্ছে না। বিশ্বের কোথাও হয়নি। যেকোনো রোগের ক্ষেত্রেই হার্ড ইমিউনিটি কঠিন একটা ব্যাপার। এটা সহজে হয় না, এটি অনেক সময়ের ব্যাপার। দেশের সব শ্রেণির মানুষ ঝুঁকির মধ্যে আছে। একজন হয়তো বাড়িতেই থাকে, কখনো বের হয়নি। কিন্তু কেউ বাইরে থেকে এলে হয়তো সংস্পর্শে এসেছে বা বাইরের কাগজপত্র ধরেছে। এমন ব্যক্তিকে জানি, যে সাংঘাতিকভাবে আক্রান্ত হয়েছে। সংক্রমণ কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণির মধ্যেও সীমাবদ্ধ নেই। কিন্তু পরিস্থিতি এমন হলেও অনেকের মধ্যে সচেতনতা নেই। অনেক ঝুঁকি আছে। যে ঢাকা শহরে এত সংক্রমণ, সেখানে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিতেও দেখা যাচ্ছে। না, এটা দোষ দিচ্ছি না। আমাদের জীবন চালাতে হবে। অনেক মানুষকে প্রয়োজনেই হয়তো বের হতে হবে। কিন্তু নিয়মগুলো তো মানতে হবে। মাস্ক তো মুখে রাখতে হবে। মাস্ক পরলেও দেখা যাচ্ছে কথা বলার সময় তা খুলে ফেলছে। এখানে লাভটা কী হলো?
আমাদের অনেককে বাজারে যেতে হচ্ছে। এখানে পরামর্শ হলো, যাওয়ার সংখ্যাটা কমিয়ে দিন। একবারে একটু বেশি বাজার করে নিয়ে আসুন। বাইরে গেলে দুটো মাস্ক পরা যেতে পারে, চোখ ঢাকার জন্য চশমা বা গগলস পরা যেতে পারে, জনসমাগমটা একেবারে বর্জন করা উচিত। যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন বলে সন্দেহ করছেন, তাঁরা দ্রুত টেস্ট করান।
এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও কিন্তু আমরা টিকা নিয়ে আশাবাদী হয়ে আছি। কদিন আগে বৈশ্বিক টিকা সম্মেলন হয়ে গেছে। সেখানে বড় আকারের অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। যেন সব দেশের মানুষ টিকা পেতে পারে, সে বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে। যেহেতু এত দেশে টিকা তৈরি হচ্ছে, পরীক্ষা হচ্ছে—আমি বাংলাদেশ নিয়ে অনেক আশাবাদী।
আর এখন করোনা প্রতিরোধে প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া বেশি দরকার। কন্ট্রাক্ট ট্রেসিংয়ের (রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ) জন্য আসা অ্যাপ একটা ভালো খবর দিচ্ছে। এগুলো আমাদের দরকার। কিন্তু সব উদ্যোগেরই গতি বাড়াতে হবে। প্রতিরোধের উদ্যোগে সবাই শামিল আছে, এটা আমাদের আশান্বিত করে।
ড. ফেরদৌসী কাদরি
আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী
[ad_2]
Source link