একটি বাগান ও ভালোবাসার গল্প

[ad_1]

মনের গহিনে লুকিয়ে রাখা প্রবাসজীবনের হাজারো গল্পের ভেতর থেকে একটি গল্প প্রায় আমাকে জাগ্রত করে। স্মৃতির ক্যানভাসে আঁকি দ্বীপের মধ্যে গড়ে ওঠা একটি দেশ। সেই দেশের একটি কোম্পানির মধ্যে একটি বাগানের গল্পের ভেতর আমিও অল্পস্বল্পভাবে হারিয়ে যাই।


আমার কোম্পানির মেইন অফিসের সামনের ফুলবাগানে একটি সম্মানীত গাছ আছে। গাছটির নাম ‘কেপেল গাছ’ (Keppel Tree)। সম্মানীত বলা হয় এ কারণে, মি. লিম সিন সিয়া (Mr. Lim Chin Siew) মি. চারলেস ফু (Mr. Charles Foo) মি. লুম সি কোং (Mr. Lum Chee Kong) তিনজন বিশিষ্ট ব্যক্তি রোপণ করেছেন গাছটি। গাছটির প্রতি কোম্পানির অফিস কর্তৃপক্ষও সচেতনতার সঙ্গে যত্নবান। চারদিক দিয়ে কাঠের বেষ্টনী বানিয়ে ছাউনি দিয়ে রাখা। সম্মানের সঙ্গে গাছটি পরিচর্যা করা হয়। অনবরত কৃত্রিম ঝর্ণার জল গড়িয়ে পড়ার সুবাদে বাগানের মাটি থাকে উর্বর।


মাটি হতে পরিমাণমতো উর্বরতা পাওয়ায় বাগানের সব গাছ গাঢ় সবুজ রং ধারণ করেছে। সকালবেলা ঘুমভাঙা অলস চোখে আলসেমি কাটিয়ে অফিসের গেট দিয়ে প্রবেশ করার কিছু দূর পর চোখে পড়বে এই ফুলবাগানের দৃশ্য। চলন্ত অবস্থায় নাকের ডগায় লেগে যায় ফুলের সুবাস। প্রতিদিন অন্তত দুই-একবার এই বাগানের দিকে চোখ পড়েনি এমন কেউ খুঁজে পাওয়া যাবে না। পলকহীন চোখে গাছগুলোর দিকে তাকালে মনে হবে সবুজের নির্যাস চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে। গাছেরাও ডালপালা মেলে দিয়ে তাদের নিয়মে হাসছে। আমাদের ফুসফুস সতেজ করে আরেকটা দিন পৃথিবীর বুকে বাঁচার অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে।


বাগানের দক্ষিণ দিকে রয়েছে নানারকম টাইম ফুলগাছ। যার বৈজ্ঞানিক নাম (Portulaca Grandiflora)। সবচেয়ে বেশি দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণী টাইম ফুলগুলো। ফুলগুলো লাল, হলুদ, সাদা গোলাপি রঙে রঙিন। আছে গোলাপ ফুলের গাছ। বিভিন্ন নিয়মকানুন আর কর্মব্যস্ত জীবনে অনেকে উপভোগ করতে পারে না বাগানের আসল সৌন্দর্য।


বাগানে গাছের ডালে বসে মনের সুখে ঘুঘু পাখি গান গায়। মায়াবী ঘুঘুর কণ্ঠে শোনা যায় সঙ্গী খোঁজার আকুল আহ্বান। পৃথিবীর কোনো প্রাণী একাকী বসবাস করতে পারে না। বেঁচে থাকতে হলে সঙ্গীর একান্ত প্রয়োজন হয়। সঙ্গীবিহীন জীবন জড়বস্তুর ন্যায়। সুখ–দুঃখ ভাগাভাগি করার মতো বিপরীত একটি প্রাণ সব সময় প্রয়োজন। পাখিদের বেলায় ও একই।


আমি সকালে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করার পর বাগানের দিকে কিছুটা সময় নীরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। বৃক্ষের কাছে থেকে বন্ধুত্বের টানের মর্মার্থ খুঁজি। ভালোবাসার পরিধি পরিমাপ করি। জীবনের প্রতি জীবনের ভালোবাসার কৌশল শিখি।
মনোমুগ্ধকর এই বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পেছনে বেশ কিছু মানুষের অবদান প্রশংসার দাবি রাখে। কেপেল বেনয় (Keppel Benoi) সেক্টরের জেনারেল ম্যানেজার, ইয়ার্ড ম্যানেজার, অপারেশন ম্যানেজার এবং প্রতিটা সেকশন ম্যানেজারের ভূমিকা অতুলনীয়। তাদের প্রত্যেকে


বৃক্ষের প্রতি একান্ত ভালোবাসায় ফুলবাগানটা সুন্দরভাবে টিকে আছে। ধুলোয় ভরা জীবনে গাছের কাছে হতে পরিষ্কার বাতাস মানবজাতির একান্ত প্রয়োজন। প্রতিটা মানুষের হৃদয় হোক গাছের মতো শান্ত কোমল। আমার মতো একজন সাধারণ মানুষ বেঁচে না থাকলে কারও কিছুই আসবে অথবা যাবে না। কিন্ত বিশুদ্ধ বাতাস গ্রহণ করতে অগণিত মানুষের জন্য বাগান বাঁচিয়ে রাখা একান্ত প্রয়োজন। বেনয় সেক্টরের ফুলবাগান দীর্ঘদিন ঠিকে থাকুক সবার মধ্যে।


আমি একদিন চলে যাব এই শহর ছেড়ে এই কোম্পানি ছেড়ে। এই দেশের প্রতি, এই কোম্পানির প্রতি দীর্ঘদিনে জমে ওঠা মায়া–মমতা ছেড়ে চলে যাব আপন ঠিকানায়। আজও কিছু মানুষের মনের মতো হতে পারিনি। আমি কিন্তু সবাইকে মনে স্থান দিয়ে ভালোবেসেছি। হতে চাইলে সবার মনের মতো সব সময় হওয়া যায় না। হাতের সব কটি আঙুলের উচ্চতা একই রকম আসা করা অসম্ভব। ভালোমন্দের ভেতর আমাদের মানিয়ে নিতে হয় জীবন। যেমন আলোর বিপরীতে অন্ধকার।


আমি একজন সাধারণ কর্মী। আমাকে কেউ মনে রাখবে না। আমাকে মনে রাখার কথাও নয়। এমনকি আমার সহকর্মীও মনে রাখবে না। অথচ এই দেশ, এই কর্মস্থল ছেড়ে চলে গেলে রেখে যাব কিছু পরিচিত মুখ। একটি ফুলের বাগান। কয়েকটি বৃক্ষ। ঝর্ণার জল গড়িয়ে পড়া একটি লেক। লেকের জল। জলে ভাসা পদ্ম। বৃক্ষের ডালে বসে আপন সুখে কবুতরের পালক ঘষা দৃশ্য। যৌবন বয়সের মহামূল্যবান সময়। যে সময়টা জীবনে আর কোনো দিন ফিরে আসবে না। এই দেশকে ঋণী করে যাব যৌবন বয়সের বিনিময়ে।


saiftamal9@gmail.com



[ad_2]

Source link
IRFAN H

Hi, This is IrfanH I love to travel and passing by gossip with friends.

Post a Comment

Please do not enter any spam link in the comment box

Previous Post Next Post
);