সুশান্তের জীবনের নারী ও অদ্ভুত বিষণ্নতা

[ad_1]

শোনা যাচ্ছিল বাঙালি চিত্রনায়িকা রিহা চক্রবর্তীর সঙ্গে সুশান্তর প্রেমের কথা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম‘ঝাপসা হয়ে আসা অতীত বাষ্পের সঙ্গে লীন হয়ে যায়। পূরণ না হওয়া স্বপ্নগুলো হাসির সঙ্গে মিলে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর। আর একটা ক্ষীণ হয়ে আসা জীবন, আমাদের দুই জীবনের সঙ্গে মধ্যস্থতা করতে অস্থির।’


এমনই দার্শনিক ভাষায় শেষ ছবির শেষ ক্যাপশন লিখেছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এই ছাত্র। সর্বশেষ এই ইনস্টাগ্রাম পোস্ট দিয়েছিলেন ৩ জুন। মায়ের সঙ্গে নিজের একটা ছবি কোলাজ করে দেওয়া। ক্যাপশনেও মিলেছিল আত্মহত্যার আভাস। এমন দিনে এমন ‘ক্ষীণ হয়ে আসা জীবনের’ কথা কে আঁচ করতে পেরেছিল! কেউ পারেনি।

আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সবাই বলছে, তাঁরা কেউ দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি এমন কিছু হবে। অথচ কী অদ্ভুত বিষণ্ন ছিল তাঁর ছোট জীবনে। যেটা নানা সময়ে নানাভাবে এসেছে। তিনি প্রকাশও করেছেন ইনস্টাগ্রামে। বিশেষ করে তাঁর শেষ দিনগুলোর ইনস্টাগ্রাম যদি দেখা যায়, তবে এটা স্পষ্টভাবে উঠে আসবে, মনের দিক থেকে কেমন যেন তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছিলেন সুশান্ত। অবশ্য মৃত্যুর পর এসব নোটিশ করলেও আগে কেউ বুঝতে পারেননি।

সুশান্ত সিং রাজপুত। ছবি: ইনস্টাগ্রামযেমন গতকাল রোববার ভারত থেকে প্রচারিত বিভিন্ন চ্যানেলের লাইভে দেখিয়েছে নানাজনের সাক্ষাৎকার। সেখানে শনিবারও যাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাঁরা বলছেন, ‘কই, আমার সঙ্গে কথা বলার সময় তো একটুও মনে হয়নি।’ ‘জীবনে ভরপুর, হাসিখুশি’ এই মানুষটা যে নিজে মৃত্যুর দরজার গিয়ে কড়া নেড়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে পারে, তা কে ভেবেছিল। তাই কাছের, দূরের—সবার কাছেই বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতন এল খবরটা, মুম্বাইয়ে নিজ বাসায় ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে ৩৪ বছর বয়সী সুশান্ত সিং রাজপুতের লাশ।

১৯৮৬ সালের ২১ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া সুশান্ত পাঁচ ভাইবোনের ভেতর সবার ছোট। তাঁর বড় চারবোন আছে। ২০০২ সালে সুশান্তের মা মারা যান। মাকে হারিয়ে ভীষণ মুষড়ে পড়েন সুশান্ত। দিল্লি টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পড়তেই থিয়েটারের দিকে ঝোঁকেন তিনি। নাচও শেখেন। অভিনয়ের জন্য ‘বিদায়’ বললেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংকে। বই–খাতা, ক্যালকুলেটর শিকেয় তুলে মন দিলেন রিহার্সেলে। তারপরই ২০০৯ সালে তাঁর জীবনে এল ‘পবিত্র রিশতা’। এর আগেও একতা কাপুরের প্রযোজনায়, ২০০৮ সালে ‘কিস দেশ মে হ্যায় মেরা দিল’ সিরিয়ালে অভিনয় করার সুযোগ পান। সিরিয়ালে অল্প দিনের মধ্যেই তাঁর চরিত্রটির মৃত্যু হয়, তবে বন্ধুত্ব থেকে যায় একতার সঙ্গে।

কৃতি শ্যাননকে বেশি দিন ভালো লাগেনি সুশান্তর। ছবি: ফেসবুকশুরু হয় পবিত্র রিশতা, শুরু হয় অঙ্কিতা লোখান্ডের সঙ্গে প্রেম। এরপর ২০১৩ সালে ‘কাই পো চে’ দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে সুশান্তর। একই বছরে মুক্তি পায় ‘শুদ্ধ দেশি রোমান্স’। ২০১৬ সালে ‘ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ মুক্তির পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সুশান্তকে। কিন্তু যখন বলিউড সুশান্তকে বরণ করে নিল, তখনই প্রায় পাঁচ বছর এক ছাদের নিচে থাকা অঙ্কিতাকে পেছনে রেখে, কৃতি শ্যাননের সঙ্গে সামনে বাড়েন সুশান্ত। শোনা যায়, অঙ্কিতাকে নাকি গোপনে বিয়েও করেছিলেন সুশান্ত। কারণ, অঙ্কিতার পরিবার বিয়ে ছাড়া একসঙ্গে থাকাকে কোনোভাবেই মেনে নেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছিল।

তবে কৃতি শ্যাননকেও বেশি দিন ভালো লাগেনি সুশান্তর। কৃতির সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর তাঁর জীবনে আসে সারা আলী খান। তাঁদের ঘনিষ্ঠতার কথা বিটাউনের অলিগলিতে কান পাতলেই শোনা যেত। তবে এই সম্পর্কও বেশি দিন টেকেনি। বেশ কয়েক দিন ধরে শোনা যাচ্ছিল বাঙালি চিত্রনায়িকা রিহা চক্রবর্তীর সঙ্গে তাঁর প্রেমের কথা। এমনকি দুজনে একসঙ্গে বিদেশ সফরের ছবি শেয়ার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই প্রেমের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিও দিয়েছেন। মাত্র চার দিন আগেই সুশান্তের পিআর ম্যানেজার, দিশা সাইলানি ১৪ তলা থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এরপর সুশান্তের লাশ পাওয়া গেল তাঁর বান্দ্রার বাসায়, ঝুলন্ত অবস্থায়। পুলিশ কোনো সুইসাইড নোট পায়নি। সুশান্তের মৃত্যুরহস্য নিয়ে পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগ ও ফরেনসিক বিভাগ একসঙ্গে কাজ করছে।


শোনা যায়, অঙ্কিতাকে নাকি গোপনে বিয়েও করেছিলেন সুশান্ত। ছবি: ফেসবুকঅঙ্কিতাকে রাজি করাতে বেশ সময় লেগেছিল সুশান্তের। ২০১০ সালে তিনি ‘ঝালাক দিখ লা যা টু’–তে অংশ নেন। এই মঞ্চেই মা দিবসে তিনি একটি নাচে বিচারক ও ভক্তদের মুগ্ধ করেন। নাচ শেষে সুশান্ত স্টেজের ওপর কান্না শুরু করলে অঙ্কিতা এসে সুশান্তকে জড়িয়ে ধরেন। সেই মঞ্চেই সুশান্ত অঙ্কিতাকে বিয়ের জন্য প্রস্তাব দেন। অঙ্কিতাও ‘হ্যাঁ’ বলেন। এরপর সুশান্তের শেষ পোস্টের মন্তব্যের ঘরেও বাঙালি প্রেমিকা রেহা চক্রবর্তী এঁকেছিলেন লালরঙা ভালোবাসা চিহ্ন। কী হয়েছিল, কে জানে!


মাকে মনে করে তাঁর ক্যারিয়ারের প্রথম একক বড় ছবি ‘ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ মুক্তির পর বলেছিলেন, ‘আজ আমি দীর্ঘজীবন বয়ে নিয়ে বেড়ানো আমার স্বপ্নকে কাছ থেকে স্পর্শ করলাম। আজকের দিনটা যদি মা দেখে যেত! তাহলে নিশ্চয়ই এক মা তাঁর সন্তানকে নিয়ে খুব গর্ব করতে পারত। মা বেঁচে থাকলে হয়তো আমার জীবনটাও অন্য রকম হতো। আমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যেত। আমার সম্পর্ক, সফলতা, পরমতা—সবকিছুর অন্য মানে দাঁড়াত। হয়তো তখন আমি নিজেকে এত বদলাতে চাইতাম না। হয়তো নিজেকে প্রতিনিয়ত বদলাতে চাই বলেই অভিনেতা হতে চেয়েছি। কে জানে! তবে মা থাকলে আমি আরও বেশি করে আমি হতে পারতাম।’

সুশান্ত বলেছিলেন, ‘মা বেঁচে থাকলে হয়তো আমার জীবনটাও অন্য রকম হতো।’ ছবি: ফেসবুকএর আগে মাকে স্মরণ করে এক কবিতায় লিখেছেন, ‘যতকাল তুমি ছিলে, আমি ছিলাম। এখন আমি কেবল তোমার স্মৃতিতে জীবন্ত হই, ঝলমল করে উঠি। ছায়ার মতো। তোমার কথা যখন মনে করি, সময় যেন থেমে যায়। চমৎকার এক নীল শান্ত সাগরপাড়ে এসে সময় থেমে যায়।’ আরেকবার লিখেছিলেন, ‘মা, মনে আছে তোমার, তুমি বলেছিলে, তুমি কখনো আমার হাত ছাড়বে না। আমি বলেছিলাম, আমি সব সময় খুশি থাকব। মনে হচ্ছে, আমরা দুজনেই মিথ্যে কথা বলেছিলাম। মিথ্যে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম।

বড় পর্দায় সুশান্তের মুক্তি পাওয়া সর্বশেষ ছবি ‘ছিছোড়ে’ দারুণ হিট করে। কেবল ভারত থেকেই ১০০ কোটি রুপির বেশি তুলে আনে। তবে ২০১৭ সালে তাঁর অভিনীত ‘রাবতা’ ছবিটি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। গত বছর সুশান্তের তিনটি ছবি মুক্তি পায়। তার মধ্যে ‘ছিছোড়ে’ হিট হলেও ‘সঞ্চিচিড়িয়া’ বক্স অফিসে সাফল্যের মুখ দেখেনি। ‘ড্রাইভ’ ছবিটি সরাসরি নেটফ্লিক্সে মুক্তি পায়। সব জায়গা থেকেই নেতিবাচক মন্তব্য কুড়ায় ছবিটি। তা ছাড়া বেশ কয়েকটি ছবিও হাত থেকে ছিটকে গেছে। প্রেমে স্থির না হতে পারা, পেশাগত জীবনের ব্যর্থতা, এসব নিয়েই ছয় মাস ধরে সুশান্ত বিষণ্নতা আর হতাশায় ভুগছিলেন। যদিও পুলিশের তদন্ত চলমান, তবে ধারণা করা হচ্ছে, লকডাউনের কোলাহলহীন, জমাট বিষণ্ন দিনে আত্মহত্যাই করেছেন তিনি।



[ad_2]

Source link
IRFAN H

Hi, This is IrfanH I love to travel and passing by gossip with friends.

Post a Comment

Please do not enter any spam link in the comment box

Previous Post Next Post