আকরামের অধিনায়কত্বের ‘গুরু’ মোনেম মুন্না

[ad_1]

মোনেম মুন্না সব সময়ই আকরাম খানের অনুপ্রেরণা। ফাইল ছবিমোনেম মুন্না প্রসঙ্গ উঠলেই একটু যেন আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান। প্রয়াত মুন্নার সঙ্গে তাঁর অনেক স্মৃতি। দেশের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ফুটবল তারকাকে বড় ভাইয়ের মতো করেই পেয়েছিলেন আকরাম। আবাহনী ক্লাবে দীর্ঘদিন ছিলেন রুমমেট। মুন্নাকে নিয়ে কথা হতেই আকরাম বলছিলেন, মুন্না জাতীয় ক্রিকেট দলে তাঁর নিজের অধিনায়কত্বের প্রেরণা তো বটেই, তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের উত্থানেও।


২০০৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি সবাইকে কান্নায় ভাসিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান মুন্না। গতকাল ৯ জুন ছিল তাঁর জন্মদিন। বেঁচে থাকলে হয়তো দেশের ফুটবলের সঙ্গে এখনো জড়িয়ে থাকত তাঁর নাম। বাংলাদেশের ক্রিকেটের উত্থানের সময়টাতে মুন্নার উৎসাহ, অনুপ্রেরণা কখনো ভুলবেন না আকরাম, 'আমি যদি বলি বাংলাদেশের ক্রিকেটের উত্থানের সময়টা ১৯৯৪, তাহলে খুব ভুল বলা হবে না। ১৯৯৪-এর শেষের দিকে ঢাকায় সার্ক ক্রিকেটে সাফল্যই আমাদের ক্রিকেটকে বদলে দেয়। ওই টুর্নামেন্টের ঠিক আগে দিয়ে আমি জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব পাই। এর আগে ক্লাব দলেও কোনো দিন অধিনায়কত্ব করিনি। আমার অধিনায়কত্ব পাওয়ার খবরে দারুণ খুশি হয়েছিলেন মুন্না ভাই।’


মুন্না তখন আবাহনীর ফুটবল অধিনায়ক। ক্লাবকে সে মৌসুমে লিগ চ্যাম্পিয়ন করিয়েছেন প্রায় একহাতে। সে বছর দলবদলে আবাহনী খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ভালো ভালো তারকারা চলে গিয়েছিলেন। আকরাম খুলে দেন স্মৃতির ঝাঁপি, ‘মুন্না ভাই আমাকে তখন যে উৎসাহ ও প্রেরণা দিয়েছিলেন, সেটা আজও ভুলিনি। তাঁর উপদেশগুলো মেনেই অধিনায়কত্ব করেছি সব সময়। সার্ক ক্রিকেটে আমরা শ্রীলঙ্কা ও ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিলাম। মুন্না ভাই ফাইনালের আগে আমাকে এত উৎসাহ দিলেন, উদ্দীপনামূলক এত কিছু বলেছিলেন, মনে হচ্ছিল তিনিই যেন খেলছেন আমাদের দলে। আমাদের ক্রিকেটের উত্থানে তাঁরও অবদান আছে।’


মুন্নার সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্কই ছিল আকরাম খানের। আকরামদের পারিবারিক ক্লাব কাজীরদেউড়ি খাজা রিক্রিয়েশন ক্লাব (কেকেআরসি) এক সময় চট্টগ্রাম ফুটবল লিগে জনপ্রিয় দল ছিল। আকরামের প্রয়াত বাবা সৈয়দ খান নিজে সেই ক্লাব চালাতেন। সৈয়দ খানের মৃত্যুর পর ক্লাবটি আবাহনীকে দিয়ে দেওয়া হয় বিনে পয়সাতেই। মোনেম মুন্না অনেকবারই খেলেছেন সেই চট্টগ্রামের আবাহনীতে। আকরামদের কাজীরদেউড়ির বাড়ি থেকে প্রস্তুত হয়েই তখন আবাহনীর খেলোয়াড়েরা স্টেডিয়ামে খেলতে যেতেন, 'চট্টগ্রামে এলে মুন্না ভাই আমাদের বাড়িতে আসতেনই। আমার বড় ভাইয়া ইকবাল খানের (তামিম ইকবালের বাবা) সঙ্গেও তাঁর খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। উনি চট্টগ্রাম লিগে মোহামেডানে খেলেছিলেন ভাইয়ার কোচিংয়ে।'


ঢাকায় মুন্না ছিলেন আকরামের গাইডের মতো, ‘আবাহনী ক্লাবে তিনি ছিলেন আমার রুমমেট। এক সঙ্গে খেতাম, থাকতাম। তিনি ফুটবলার ছিলেন, অনেক বড় মাপের, সেটা সবাই জানে। ক্রিকেটের প্রতিও তাঁর আগ্রহ ছিল। আমার খেলা সম্পর্কে যথেষ্ট খোঁজখবর রাখতেন। ছোটদের গাইড করা, আগলে রাখার অসাধারণ গুণ তাঁর ছিল।’ মুন্নার ছিল পড়ার অভ্যাস। আকরামের মনে পড়ে, ‘গভীর রাত পর্যন্ত গল্পের বই, প্রবন্ধের বই পড়তেন মুন্না ভাই। খুব দিলখোলা মানুষ ছিলেন।’


মুন্নার অধিনায়কত্বের গুণাবলিও খুব টানত আকরামকে, ‘উনি ছিলেন জাত নেতা। তাঁকে দেখে অধিনায়কত্ব শিখেছি। আবাহনী ক্লাবে দেখেছি, উনি অধিনায়ক হিসেবে কীভাবে খেলোয়াড়দের উজ্জীবিত করতেন। জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবেও তো দেশকে আন্তর্জাতিক শিরোপা উপহার দিয়েছেন।’ মুন্নাকে নিয়ে একটা দিনের কথা খুব মনে পড়ে আকরামের, ‘একবার লিগ ম্যাচের আগে ক্লাবে খেলোয়াড়দের ব্রিফ্রিং হচ্ছে। খুব সম্ভবত মোহামেডান কিংবা ব্রাদার্সের বিপক্ষে ম্যাচ। বড় ম্যাচ। আবাহনীর অন্যতম ডিফেন্ডার রেহান অসুস্থ। কিন্তু মুন্না ভাই তাঁকে খেলাবেনই। আমার কানে এখনো বাজে কথাটা, “রেহান, তুই খালি দাঁড়িয়ে থাকবি। বাকিটা আমি সামলাব।” এটা কিন্তু কথার কথা বা রেহানকে অনুপ্রাণিত করতে তিনি বলেননি। তিনি আসলেই মাঠে এমনটা করতেন। এটা তাঁর সঙ্গে যেসব ফুটবলাররা খেলেছে, সবাই জানেন।’


মুন্নার মৃত্যুর কয়েক দিন আগে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন আকরাম। তখন ভাবতেও পারেননি এত অল্প বয়সেই তিনি হারিয়ে যাবেন চিরদিনের জন্য, 'মুন্না ভাই যখন খুব অসুস্থ হয়ে পড়লেন, তখনো আমরা ভাবতে পারিনি, তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন। খুব দ্রুত তাঁর অবস্থা খারাপ হয়ে গেল। মুন্না ভাইয়ের মৃত্যুটা আমার জন্য ছিল খুব বড় ধাক্কা।’


কেবল আকরামের জন্যই নয়, মোনেম মুন্নার অকালে চলে যাওয়া বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্যও বড় ধাক্কা। অপূরণীয় এক ক্ষতি।



[ad_2]

Source link
IRFAN H

Hi, This is IrfanH I love to travel and passing by gossip with friends.

Post a Comment

Please do not enter any spam link in the comment box

Previous Post Next Post
);