ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন বিষয়ে আবারও কিছু বিধিনিষেধ প্রস্তাব করেছে। এরই মধ্যে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে আমেরিকায় অ্যাসাইলাম জটিল হয়ে পড়েছিল। এখন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও বিচার বিভাগের নতুন প্রকাশিত এক বিধিমালায় এ প্রক্রিয়া আরও কঠিন করা হচ্ছে। এতে আমেরিকায় সম্ভাব্য অভিবাসীদের জন্য আশ্রয় পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। আগামী ১৫ জুন ফেডারেল রেজিস্টারে ১৬১ পৃষ্ঠার এই বিধিমালা প্রকাশ করা হবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির পুরো সময়জুড়ে আমেরিকায় শরণার্থীদের নিরুৎসাহিত করতে নানা ধরনের বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। সর্বশেষ এই প্রস্তাবটিও এর ব্যতিক্রম নয়। অবশ্য এটি কার্যকর হওয়ার আগে জনমত গ্রহণ করা হবে। আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিলের উপদেষ্টা অ্যারন রেইচিন-মেলনিক প্রস্তাবিত এই বিধিমালার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘এটি অ্যাসাইলাম পদ্ধতির পুনর্বিন্যাস তো দূরে থাক, আশ্রয় পাওয়ার বিষয়টিই প্রার্থীদের জন্য অসম্ভব করে তুলবে।’
আবেদনকারীদের মধ্যে যারা আমেরিকায় পৌঁছার আগে তৃতীয় কোনো দেশ হয়ে এসেছেন, অথচ সেই দেশে আশ্রয়প্রার্থী হননি তাদের নতুন বিধি অনুযায়ী কঠিন প্রশ্নোত্তর পর্ব মোকাবিলা করতে হবে। ল্যাটিন আমেরিকার নানা দেশ থেকে মেক্সিকো হয়ে যারা আমেরিকায় ঢুকবে, তারা মানবপাচারের শিকার হলে এ ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় পাবে। না হলে সেই ব্যক্তিও একই অবস্থার সম্মুখীন হবেন।
নতুন প্রস্তাবে বলা হয়েছে, অন্য দেশ ঘুরে আমেরিকায় আসা ব্যক্তিরা আমেরিকা ছাড়া আর কোথাও আশ্রয় আবেদন না করলে প্রকৃত শরণার্থী বলে বিবেচিত হবেন না। তাঁরা অ্যাসাইলাম প্রক্রিয়ার অপব্যবহার করছেন এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমেরিকায় থেকে যাওয়ার জন্যই আসেন বলে বিবেচিত হবেন।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, যারা অ্যাসাইলাম আবেদনের আগে এক বছরের বেশি সময় আমেরিকায় অবৈধভাবে বসবাস করছেন এবং বর্তমানে বিকল্প থাকা সত্ত্বেও একই সুবিধা নিতে চাইছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও প্রক্রিয়াটি জটিল হয়ে পড়বে। এ ছাড়া ট্যাক্স ফাইলিংয়ে ব্যর্থ হওয়া, অপরাধী সাব্যস্ত হওয়ার রেকর্ড থাকা এবং এমনকি ওই অভিযোগের বিপরীতে নির্দোষ প্রমাণিত বা অভিযোগ ফিরিয়ে নেওয়া বা মুছে ফেলা হলেও তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে যাবে।
মার্কিন মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউটের পলিসি বিশ্লেষক বলেন, ‘নতুন এ বিধির ফলে দ্রুততার সঙ্গে অ্যাসাইলাম কেসগুলোর রায় হবে, কিন্তু আশ্রয় প্রাপ্তির যোগ্যতা হারাবে আগের চেয়ে অনেক বেশি আবেদনকারী। আগে নানা সামাজিক গ্রুপের সদস্যদের অ্যাসাইলাম আবেদনের সুযোগ ছিল। নতুন বিধিতে এসব গ্রুপের সংজ্ঞাকে পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। এ কারণে একটি বিশাল গ্রুপ আবেদনের যোগ্যতা হারাবে।’
পিয়ার্স বলেন, ‘যে দেশটিতে যুগ যুগ ধরে মানবিক দিক থেকে প্রত্যেক ব্যক্তির অ্যাসাইলাম আবেদন বিবেচনা হয়ে আসছে, এ পদ্ধতি চালু হয়েছিল যেসব মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে, নতুন প্রস্তাব এসব বিষয়কে লাল ফিতায় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এতে আমেরিকায় আশ্রয় আবেদনকারীদের সিংহভাগ অবাঞ্ছিত হয়ে পড়বে।’
এ বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলে দেওয়া হয়েছে, যারা মেক্সিকো হয়ে আমেরিকায় এসে অ্যাসাইলাম চাইছেন, তাঁদের ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করতে হবে। এ ছাড়া আবেদনকারীদের নর্দার্ন ট্রায়াঙ্গেলখ্যাত তিন দেশ—গুয়াতেমালা, এল-সালভাদর ও হন্ডুরাসে পাঠানো হবে এবং আমেরিকার পরিবর্তে সেসব দেশে অ্যাসাইলাম আবেদনের জন্য সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দেওয়া হবে।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত কয়েক মাসে আমেরিকার অভিবাসন নীতিতে এক ডজনের বেশি পরিবর্তন এসেছে। ইমিগ্রেশন শুনানি স্থগিত হয়েছে, রিফিউজি প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং শিশুসহ মাইগ্র্যান্টদের আমেরিকায় প্রবেশাধিকারে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। নতুন প্রস্তাবিত এই বিধিমালায় অবশ্য করোনাভাইরাসের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
[ad_2]
Source link