শিশু ও প্রবীণের সুরক্ষায় ইসলামের শিক্ষা

[ad_1]

ইসলাম সব মানুষের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। ইসলামে রয়েছে ক্ষমা, ধৈর্য, সহনশীলতা, সহযোগিতা, সহানুভূতি ও ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা ও মহান আদর্শ। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘চরিত্রের বিচারে যে লোকটি উত্তম, মুমিনদের মধ্যে সে-ই পূর্ণ ইমানের অধিকারী’। (তিরমিজি)। তিনি আরও বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই লোকটিই আমার নিকট অধিক প্রিয়, যার নৈতিক চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর।’ (বুখারি)। 


ওআইসির ফিকাহ একাডেমির মানবাধিকারবিষয়ক ঘোষণায় শিশু, নারী ও প্রবীণদের শারীরিক ক্ষতি বা নির্যাতন থেকে নিরাপত্তা লাভের অধিকার উল্লেখ রয়েছে। এ অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করবে সরকার। বলা হয়েছে, আল্লাহর নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কারও জীবন রক্ষা করা শরিয়া নির্দেশিত একটি পবিত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য। শিশুদের দিয়ে এমন কোনো কাজ করানো যাবে না, যা তাদের ক্ষতির কারণ হয়। এতে শিশুদের শিক্ষার অধিকার দেওয়া হয়েছে, তাদের জন্য জ্ঞানার্জন বাধ্যতামূলক এবং শিক্ষার সুব্যবস্থা করার দায়িত্ব সমাজ ও রাষ্ট্রের। 


সমাজে মেয়েশিশুরা সর্বাধিক বঞ্চনার শিকার হয়। গৃহে, স্কুলে, কলেজে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, অফিসে–আদালতে ইভ টিজিং, যৌন নির্যাতন, অ্যাসিড নিক্ষেপ ও বিভিন্নভাবে তারা মর্যাদাহানির শিকার হচ্ছে। অথচ ইসলামে নারী বা মেয়েদের অনেক উচ্চ স্থান দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করে জীবন যাপন করবে।’ (নিসা: ১৯)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে–ই উত্তম, যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম।’ (তিরমিজি)। ‘যে ব্যক্তির কোনো কন্যাসন্তান থাকে আর সে তাকে জীবন্ত কবর দেয় না, তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে না, অন্য সন্তান অর্থাৎ ছেলেসন্তানকে কন্যাসন্তানের ওপর প্রাধান্য দেয় না, সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (আবু দাউদ)। তাই নারী বা মেয়েশিশুদের প্রতি উত্তম ব্যবহার করা প্রতিটি মুমিনের ইমানি দায়িত্ব ও নৈতিক কর্তব্য। 


শৈশব ও বার্ধক্য প্রকৃতির অমোঘ নিয়ম। শৈশব ও বার্ধক্য মানবজীবনের এক অনিবার্য বিধান। শৈশব ও বার্ধক্য সৃষ্টির সূচনা ও পূর্ণতার উদাহরণ। কোরআন মাজিদে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন দুর্বল অবস্থায়, দুর্বলতার পর তিনি দেন শক্তি, শক্তির পর আবার দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং তিনিই সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।’ (সুরা-৩০ রুম, আয়াত: ৫৪)। শৈশবে মানুষ দুর্বল থাকে, বার্ধক্যেও দুর্বলতার দিকেই ফিরে আসে। বার্ধক্য মানেই নানাবিধ দুর্বলতা। বার্ধক্যপীড়িত মানুষের প্রতি যত্নœবান হওয়া ও সহানুভূতিশীল হওয়া খোদার বিধান। 


প্রিয় নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আমল করে নাও এসবের পূর্বেই। ওই দারিদ্র্য যা আত্মবিস্মৃত করে দেয়, ওই প্রাচুর্য যা দাম্ভিক করে তোলে, ওই রোগব্যাধি যা জরাগ্রস্ত করে ফেলে, ওই বার্ধক্য যা বুদ্ধিহীন করে ছাড়ে।’ (তিরমিজি শরিফ, হাদিস: ২৩০৬)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘তোমরা পাঁচটি জিনিসের পূর্বে পাঁচটি জিনিসের মূল্যায়ন করো। যৌবনকে বার্ধক্যের আগে, অবসরকে ব্যস্ততার আগে, সুস্থতাকে অসুস্থতার আগে, জীবনকে মৃত্যুর আগে।’ (তিরমিজি ও আবু দাউদ)। 


উন্নত ও সুশীল সমাজ গঠনে প্রয়োজন পরিবারব্যবস্থা ও সৌজন্যবোধ, আদব-আখলাক, তাহজিব-তমদ্দুন, শিক্ষা-সংস্কৃতি। আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে বলেন, ‘তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন, তিনি ব্যতীত অন্য কারও ইবাদাত না করতে ও পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। তাদের একজন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের উফ বলো না এবং তাদের ধমক দিও না; তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক কথা বলো। মমতাবশে তাদের সামনে নিজেকে বিনয়াবনত কর এবং বল, “হে আমার প্রতিপালক! তঁাদের প্রতি দয়া করো যেভাবে শৈশবে তঁারা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।”’ (সুরা-১৭ ইসরা, আয়াত: ২৩-২৪)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘বাবা-মায়ের সঙ্গে সদাচারের একটি দিক হলো মা-বাবার বন্ধুস্থানীয়দের সঙ্গে সদাচার ও সুসম্পর্ক রাখা।’ (মুসলিম)। বলা বাহুল্য, এটা নবীন ও প্রবীণের মধ্যে সুসম্পর্ক ও সদাচারের এক অতুলনীয় ব্যবস্থা। 


সারা পৃথিবীর সব মানুষ ও সব বস্তু দুই ভাগে বিভক্ত— বড় ও ছোট, এর বাইরে কেউ নেই; কিছু নেই। এই বড় ও ছোট সময়ের ব্যবধানে বা শক্তি ও সম্মানে। নির্বিঘ্নে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ছোট ও বড় একে অন্যের সাহায্য–সহযোগিতা প্রয়োজন। আমাদের নিজেদেরই স্বার্থে আমাদের সবার উচিত বড়কে সম্মান করা ও ছোটকে স্নেহ করা। 


দুর্যোগ ও মহামারিতে শিশু নারী ও প্রবীণদের প্রতি অধিক যত্নশীল হতে হবে। কারণ, তারা তুলনামূলকভাবে বেশি অসহায় ও দুর্বল। 


মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম–এর সহকারী অধ্যাপক 


smusmangonee@gmail,com



[ad_2]

Source link
IRFAN H

Hi, This is IrfanH I love to travel and passing by gossip with friends.

Post a Comment

Please do not enter any spam link in the comment box

Previous Post Next Post