‘এতডি চাউল-সদায় কত্ত দিন দেহি নায়’

[ad_1]

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত ৬০টি পরিবারের মধ্যে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়। বুধবার বরিশাল নগরের কালিজিরা নদীর তীরে অবস্থিত দক্ষিণ জাগুয়া এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলোবকুল বেগমের (৭০) স্বামী মারা গেছেন বছর সাতেক আগে। এক মেয়ে বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর এখন তিনি সুগন্ধা নদীর তীঁরে একটা ঝুপড়ি ঘরে থাকেন, একাই। গত মাসে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এখনো মেরামত করতে পারেননি। বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও এত দিন মানুষের বাড়িতে কাজ করেই নিজের পেটটুকু চালিয়ে নিতে পরেছেন। কিন্তু করোনার কারণে দুই মাসের বেশি সময় ধরে সে কাজেও কেউ আর তাঁকে ডাকে না। এখানে-ওখানে চেয়ে-চিন্তে একবেলা খান তো দুবেলা না খাওয়া অবস্থায় দিন কাটে। এত দিনে একবেলাও পেট ভরে খাওয়ার চিন্তাও করেননি বলে জানালেন বকুল বেগম।


গত বুধবার দুপুরে প্রথম আলো ট্রাস্টের চাল, ডাল, আলুসহ নিত্যপণ্য সহায়তার ব্যাগটি তাঁর হাতে তুলে দেওয়ার পর দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। বললেন, ‘এতডি চাউল-সদায় কত্ত দিন দেহি নায়। মানষের কাছে চাইয়্যা-চিন্তা এত দিন খাইছি। একবেলা রাইন্ধা তিনবেলা একটু একটু খাইছি। দিন তো নি যায়। পেট ভরণের চিন্তা করতে পারি নায়। আর এহন হাঁটমু, হেই শক্তিও নাই। তোমাগো তেরান পাওনে এহন কয়েকটা দিন নিশ্চিন্তায় ঘরে বইয়্যা প্যাট ভইর‌্যা দুগ্গা ভাত খাইতে পারমু।’


গত বুধবার দুপুর ১২টার দিকে বরিশাল সদরের জাগুয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কালিজিরা এলাকায় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত ৬০টি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় প্রথম আলো ট্রাস্টের খাদ্যসহায়তা।


সুগন্ধা তীরে ভাঙন আর আম্পানে ঘরদোর ক্ষতিগ্রস্ত জাহানারার অবস্থাও এমন। জোয়ারে ঘর-দুয়ার দিনে-রাতে দুবার ভাসে। ঘরে খাবার নেই। প্রথম আলো ট্রাস্টের খাদ্যসহায়তা পেয়ে তাঁর চোখেও স্বস্তি ফুটে উঠল। বললেন, ‘স্বামী নাই, একটা মেয়ে বিয়া দিছি। এলহা মানুষ কোনো দিন খাই, আবার যেদিন জোডাইতে না পাই হেদিন না খাইয়্যা থাহি। তোমো এহন কয়েকটা দিন খাওনের চিন্তা লাগবে না।’


ক্ষতিগ্রস্ত সোহাগ কাজী (৩২), মাসুম মিয়া (৩০) দুজনই প্রতিবন্ধী। আম্পানের পর তাঁদের দুজনের পরিবার চলছে টানাপোড়েনের মধ্যে। সোহাগ কাজীর (৩২) জন্ম থেকেই বাঁ পা চিকন হয়ে বেঁকে গেছে। বিয়ে করেছেন। দুই ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী আর মাকে নিয়ে সংসার। আগে রিকশা চালাতেন। কিন্তু পায়ের সমস্যাটা বেড়ে যাওয়ায় বছরখানেক রিকশা চালাতে পারেননি। এরপর দিনমজুরের কাজ করতেন। কিন্তু করোনার মধ্যে সে কাজেও কেউ নিচ্ছে না এখন। এরপর আম্পানে মাথার গোঁজার ঠাঁইটুকুও ভেঙে পড়ার জোগাড় হওয়ায় এখন দিশেহারা অবস্থা। ঘরে খাবারের টানাটানি, তার ওপর ঝড়ের ক্ষতি। সোহাগ বললেন, ‘আপনেরা চাউল-সওদা দিছেন, খুব উপকার অইলো। পোলাপান আর পরিবার নিয়ে কয় দিন একটু আছানে থাকতে পারমু।’


আরেক প্রতিবন্ধী মাসুম মিয়ার (৩০) হাত-পা ছোটবেলায় জ্বরে চিকন হয়ে যায়। কোনো কাজ করতে পারেন না। বাবা মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। এখন মানুষের কাছ থেকে চেয়েচিন্তে পরিবার চলে। মাসুম বলেন, ‘এহন মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য খারাপ। কেউ বেশি টাহাপয়সা দেয় না। আপনেরা চাইল-ডাইল দেওনে একটু চিন্তামুক্ত অইলাম।’


প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা সকালে এসব খাদ্যসহায়তা বিতরণের জন্য দক্ষিণ কালিজিরা এলাকায় যান। এরপর দুপুর ১২টার দিকে ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারের হাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সহায়তা তুলে দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কালিজিরা এলাকার তরুণ ব্যবসায়ী সাগর হোসেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তরুণ তামিম হোসেন, বরিশাল বন্ধুসভার সভাপতি মেহেদী হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক নাইমুল ইসলামসহ বন্ধুসভার সদস্যরা।


ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।
হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ ত্রাণ তহবিল
হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।



[ad_2]

Source link
IRFAN H

Hi, This is IrfanH I love to travel and passing by gossip with friends.

Post a Comment

Please do not enter any spam link in the comment box

Previous Post Next Post