কলিনদ্রেস দিয়েই গেলেন বেশি

[ad_1]

দানিয়েল কলিনদ্রেস। ছবি: প্রথম আলো


প্রায় দেড় মৌসুম বাংলাদেশের ফুটবলে আলো ছড়িয়ে বিদায় নিলেন কোস্টারিকার জার্সিতে রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলা ফুটবলার দানিয়েল কলিনদ্রেস।


রংধনুর রং মেখে উৎসবের প্রস্তুতি ছিল পুরোমাত্রায়। দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফুটবলে পা রেখেই বসুন্ধরা কিংসের প্রথম শিরোপা জয় যেন সময়ের ব্যাপার মাত্র! কিন্তু বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আবাহনী লিমিটেডের কাছে হেরে ফেডারেশন কাপের শিরোপা হাত ছোঁয়া দূরত্ব থেকে হাতছাড়া হয়ে গল!চ্যাম্পিয়ন লেখা লাল টি শার্ট পরে আসা কিংস সমর্থকদের চোখে বেদনার অশ্রু।


কোস্টারিকার জার্সিতে রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলা ফুটবলার দানিয়েল কলিনদ্রেস মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান ভাঙা হ্রদয়ে। বসুবন্ধরা কিংস সতীর্থদের কাছে ডেকে বললেন, 'আমরা রানার্সআপ হওয়ার দল নই। সবার কাছে অনুরোধ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রানার্সআপ ট্রফি নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করো না। আমরা একদিন চ্যাম্পিয়ন হয়েই ট্রফি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি পোস্ট করব।'


পরের গল্পটা সবারই জানা। ২০১৮ সালের ফেডারেশন কাপে রানার্সআপ হওয়ার পর চ্যাম্পিয়নের সব ট্রফিই উঁচিয়ে ধরেছে কলিনদ্রেসের দল। কলিনদ্রেসের পাখায় চড়ে দুই মৌসুম মিলিয়ে টানা তিনটি শিরোপা জয় বসুন্ধরার – প্রিমিয়ার লিগ, স্বাধীনতা কাপ ও ফেডারেশন কাপ। কলিনদ্রেসের মাথায় উঠেছে লিগ ও ফেডারেশন কাপে সেরা খেলোয়াড়ের মুকুট। সব মিলিয়ে ৪৮ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন ২৬ টি।

রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলার তাজা অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০১৮ সালে বসুন্ধরায় নাম লেখান কলিনদ্রেস। তাঁকে দলে ভিড়িয়ে একটা চমকই উপহার দিয়েছিল নবাগত করপোরেট দলটি। বিশ্বকাপে খেলা ফুটবলারের ভালো–মন্দ নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস কারও ছিল না। শুধু দেখার বিষয় ছিল এই দেশের 'দূষিত' ফুটবল আবহাওয়ার সঙ্গে কতটা মানিয়ে নিতে পারেন তিনি। সেটি ভালোভাবে পেরেছিলেন বলেই প্রতিটি ম্যাচে নিজের সামর্থ্যের জানান দিয়েছেন। বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন না করে ঢাকার ফুটবল থেকে তাঁর বিদায়ের ঘোষণা তাই এ দেশের ফুটবলপ্রেমীদের জন্য বেদনাহত হওয়ার মতোই খবর। কিংস সমর্থকদের ছাপিয়ে কষ্টটা দেশের আপামর ফুটবল প্রেমীদেরই। বিশ্বকাপ খেলা একজন বিশুদ্ধ ফুটবলার কাছ থেকে দূরে চলে যাওয়ার কষ্ট।


বিশ্বকাপ খেলে বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে পা রাখা চতুর্থ বিদেশি ছিলেন কলিনদ্রেস। ১৯৮৭ সালের লিগে প্রথমবারের মতো এসেছিলেন আটাত্তরের বিশ্বকাপ খেলা ইরানি গোলরক্ষক নাসের হেজাজি এবং ছিয়াশির বিশ্বকাপ খেলা দুই ইরাকি ফুটবলার সামির শাকির ও করিম মোহাম্মদ। প্রায় ৩০ বছর পরে দেশের প্রানহীন ফুটবলে আলোকবর্তিকা হয়ে এসেছিলেন কলিনদ্রেস।


একজন উঁচু মানের খেলোয়াড় শুধু তাঁর দলকেই সমৃদ্ধ করেন না, তাঁর আলোয় আলোকিত হয় চার পাশও। বসুন্ধরা তো কলিন্দ্রেসের কাছ থেকে সেরা পারফর‌্যমান্সটা পেয়েছেই, তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পেরেছেন স্থানীয় ফুটবলাররাও। পায়ে চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মতো কোনো ঝলক দেখা না গেলেও কখনো ৯ নম্বর, কখনো উইঙ্গার হিসেবে খেলে দেখিয়েছেন আধুনিক ফুটবলের বিজ্ঞাপন। হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন।


তিনি যে বিশ্বকাপের ফুটবলা, তা ফুটে ওঠে বলে তার প্রতিটি স্পর্শে, প্রতিটি পাসে, প্রতিটি ড্রিবলিং আর ফিনিশিংয়ে। নিজে গোল করার চেয়ে সতীর্থদের দিয়ে গোল করানোতেই ছিল তাঁর বেশি আনন্দ। অন্তত ঢাকার ফুটবলে কলিনদ্রেসের সর্বশেষ ম্যাচটি হয়ে থাকবে সেই বিজ্ঞাপনই।


১১ মার্চ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে এএফসি কাপে মালদ্বীপের টিসি স্পোটর্সের বিপক্ষে ম্যাচটা মনে করে দেখুন। স্মৃতি থেকে বের হয়ে আসবে একের পর এক গোল উদযাপনের ছবি। ফুটবল খেলাটা যে কত সহজ, উপযুক্ত সঙ্গী আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের সাবেক স্ট্রাইকার হার্নান বার্কোসকে পেয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কলিনদ্রেস। দুই জনের সুরভী ছড়ানো রসায়নে পুড়ে ছারখার হয়ে হয়েছিল মালদ্বীপের ক্লাবটি। ৫-১ গোলের জয়ে এক হালি গোল ছিল বার্কোসেরই। কলিন্দ্রেস নিজে একটি গোল করা ছাড়াও দুটি গোল করিয়েছিলেন বার্কোসকে দিয়ে।


কিন্তু যেই না গোল বন্যা দেখিয়ে লোভ বাড়িয়ে দিলেন , অমনি করোনা ভাইরাসের কারণে ফুটবলেরই ছুটি! কলিনদ্রেসের ফুটবল কলাও তাই থেমে গেল। এখন তো চলেই যাচ্ছেন বাংলাদেশ ছেড়ে। নিয়ে যাচ্ছেন এই দেশের আপামর ফুটবলপ্রেমীর অকৃত্রিম ভালোবাসা।


কলিনদ্রেস বাংলাদেশে আসায় ফুটবল মানচিত্রে হয়তো বাংলাদেশের কোনো পরিবর্তন হয়নি, বাংলাদেশের ফুটবলের মানও হয়তো রয়ে গেছে আগের জায়গাতেই। তবে অন্ধকার ভেদ করে আশার আলোর রেখা মৃদু হলেও ফুটে উঠেছে। তাঁকে ঘিরে ঘরোয়া ফুটবলে অনেক দিন পরে যে উত্তেজনার আমোদ ছড়িয়েছে, সেটাই তো বড় পাওয়া। এই আনন্দটুকু উপহার দেওয়ার জন্য হলেও একটা ধন্যবাদ পেতে পারেন কলিনদ্রেস। তবে সেটিও যা তিনি দিয়ে গেলেন, তার চেয়ে বেশি হবে না।



[ad_2]

Source link
IRFAN H

Hi, This is IrfanH I love to travel and passing by gossip with friends.

Post a Comment

Please do not enter any spam link in the comment box

Previous Post Next Post