গার্মেন্টসকন্যার মহাকাশ জয়

[ad_1]

আজ থেকে ঠিক ৫৭ বছর আগে ১৯৬৩ সালের ১৬ জুন প্রথম নারী হিসেবে মহাকাশে পাড়ি দেন রুশ নভোচারী ভেলেন্তিনা তেরেসকোভা। দারিদ্র্য জয় করে নভোচারী হওয়া সেই মহিয়সী নারী এখন আশি পেরিয়েে এসেও স্বপ্ন দেখেন মঙ্গলজয়ের।  তাঁর শৈশব-কৈশোর-কর্মজীবনটাকে ফিরে দেখা যাক-


একজন ট্রাক চালকের মেয়ের স্বপ্ন আর কতই বা বড় হবে! তার ওপর মা যদি হন গার্মেন্টস কর্মী, স্বপ্নটা তখন স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে একটা কাজ জুটিয়ে খাওয়া-পরার নিশ্চয়তার গণ্ডিতেই বাঁধা থাকে। তা সেই মেয়ে তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশের নাগরিক কিংবা ইউরোপের ঝাঁ চকচকে কোনো শহরের বাসিন্দাই হোন কেন, এ অবস্থা থেকে মহাকাশ জয়ের স্বপ্নটা তাই আকাশ-কুশুমই হতে পারে। হাড়-জিরজিরে পরিবারের স্কুল-পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা কখনো-কখনো বিমানের পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখেন বটে, সেটাও অতিবাসানার কাতারেই পড়ে। কিন্তু কিছু মানুষ তো ব্যতিক্রম থাকেনই, আকাশ-কুশুম স্বপ্নটাকেই তাঁরা স্রেফ অধ্যাবসায় আর কঠোর পরিশ্রমের জোরেই বাস্তবে পরিণত করে নিজেরা পৃথিবীর অমর ইতিহাসগাথার অংশ হয়ে যান। রুশ মহাকাশচারী ভেলেন্তিনা তেরেসকোভাও তেমনি অমর ইতিহাসগাথার অংশ হয়ে গেছেন পৃথিবীর প্রথম নারী মহাকাশচারী বনে গিয়ে। অথচ তাঁর জীবনের গল্পটাও হতে পারত আর দশটা হত-দরিদ্র মেয়ের মতো।



ভেলেন্তিনার জন্ম ১৯৩৭ সালে ৬ মার্চ বলশয় মাসলেনিনকভ গ্রামে। বাবা ট্রাক চালক, মা গার্মেন্টে ছোট্ট চাকরি করেন। কিন্তু দুবছর বয়সেই বাবাকে হারান রুশ-ফিনিশ যুদ্ধে। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গ্রাম ছাড়েন। চলে আসেন ইয়ারোস্লাভ এলাকায়। সেখানেই স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু স্কুলে পড়ার সঙ্গতি তাঁর ছিল না। মা গার্মেন্টেসে চাকরি করেন, তাই তেরেসকোভাও চাকরি খুঁজতে থাকেন।


 
প্রথমে একটা টায়ার তৈরির কারখানায় কাজ জুটিয়ে নেন। পরে মায়ের মতো তিনিও চলে যান গার্মেন্টেসে। দিনে চাকরি আর রাতে স্কুল। এভাবেই অতি কষ্টে তেরেসকোভার লেখাপড়ার পাঠ চলে। ছাত্রাবস্থায় বুকের ভেতর একটা স্বপ্ন বুনন করে চলেন- একদিন তিনি পাইলট হবেন, প্যারাশুট নিয়ে লাফ দিয়ে পড়বেন বিমান থেকে।



লেখাপড়া অসমাপ্ত রেখেই তেরেসকোভা স্বপ্ন পূরণের পথে অনেকটাই এগিয়ে যান। বন্ধুর পরামর্শে ভর্তি হন এক স্কাই ডাইভিং ক্লাবে। সেই ক্লাবের ব্যানারে আঞ্চলিক স্কাই ডাইভিং প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। প্রথমবারেই বাজিমাত! সবাইকে পেছনে ফেলে সেই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন তেরেসকোভা। 



কিন্তু মায়ের এগুলো পছন্দ নয়। তিনি ভাবতেন, আর দশটা মেয়ের মতো ভেলেন্তিনাও মেয়েদের কাজ করুক। রুশ-মার্কিন স্নয়ুযুদ্ধ তখন তুঙ্গে। জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে- সবর্ত্রই চলছে তাঁদের পেশী প্রদশর্নের প্রতিযোগিতা। দূর মহাকাশই বা কূরুক্ষেত্র হবে না কেন?


 
১৯৬১ সালে এসে যুক্তরাষ্ট্রকে মোক্ষমভাবে টেক্কা দেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। ইতিহাসের প্রথম মানুষ হিসেবে মহাকাশ ভ্রমণ করেন রুশ নভোচারী ইউরি গ্যাগারিন। সোভিয়েতের এই জয় কিন্তু মার্কিনিদের দমাতে পারেনি, তার প্রমাণ যুক্তরাষ্ট্র দেয় ১৯৬৯ সালে নীল আর্মস্ট্রংদের চাঁদের অবতরণের মধ্য দিয়ে। গ্যাগারিনের মহাশূন্য ভ্রমণের পর সোভিয়েতের ভাবনায় তখন নতুন কিছু উঁকি দিচ্ছে। তাঁরা এবার একজন নারীকে মহাশূন্যে পাঠাতে চান। কিন্তু কার ভাগ্যে ছিঁড়বে সেই দুর্লভ মর্যাদার শিঁকে। রুশ মহাকাশবিজ্ঞানীরা আবেদন চাইলেন দেশের নারীকূলের মধ্য থেকে। নির্বাচক দলের প্রধান ইউরি গ্যাগারিন স্বয়ং। হাজার চিঠি আসে রুশ নারীদের কাছ থেকে। তাদের মধ্য থেকে সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে তাদের ডাকা স্বাক্ষাৎকারোর জন্য। এঁদের মধ্য থেকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয় পাঁচজনকে। কিন্তু মাত্র একজনকে পাঠানো হবে মহাকাশে।



ভাইভা থেকে নির্বাচিত পাঁচ জনকে মস্কোয় নিয়ে যাওয়া হলো। চলল দীর্ঘ এক বছরের প্রশিক্ষণ। শেষমেষ পাওয়া গেল আসল জনকে। স্বল্প-শিক্ষিতা ভেলেন্তিনা নির্বাচিত হলেন মহাকাশ ভ্রমণের জন্য। ১৯৬৩ সালের ১৬ জুন ভস্কত ৬ মহাকাশে প্রথমবারের মতো উঠল নারীর জয়-পতকা।



মহাশূন্যে প্রায় ৭২ ঘণ্টার সফর ছিল তেরেসকোভার। এর মধ্যে তিনি ৪৮ বার পৃথিবী প্রদিক্ষণ করেন। মাঝে তাঁর নভোযানটি দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পড়তে বেঁচে যায়। ১৯ জুন পৃথিবীতে অবতরণ করেন তেরেসকোভা।



মহাকাশ জয়ের পর তেরেসকোভা আত্মন্নোয়নে মনযোগ দেন। আবার শুরু করেন অসমাপ্ত লেখাপড়া। ডিপ্লোমা ও ডক্টটেরট ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৩ সালে বিয়ে করেন নভোচর আন্দ্রিয়ান নিকোলায়েভকে। পরে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। সোভিয়েতের পতন হয়েছে ঠিক হয়েছে ঠিকই কিন্তু তেরেসকোভার রাজনৈতিক পরিচয় মুছে যায়নি আজও। ২০১৬ সালে তিনি রুশ ফেডারেল সরকারের সংসদের নিম্নকক্ষের সদস্য নির্বাচিত হন। একই পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন আগেও।



ভেলেন্তিনা তেরেসকোভার বয়স এখন ৮৩ বছর। এই সাহসী নারীর স্বপ্ন কিন্তু ফুরায়নি এখনো। তিনি এখন নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন মঙ্গলজয়ের। এ শতাব্দীর ত্রিশের দিকে মঙ্গলে মানুষ পাঠাতে চায় মার্কিন মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসা। মঙ্গলযাত্রীরো আর কখনো পৃথিবীতে ফিরবে না জেনেও সম্প্রতি তেরেসকোভা সেই অভিযানের অংশ হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।



সূত্র : দ্য গার্ডিয়য়ান



[ad_2]

Source link
IRFAN H

Hi, This is IrfanH I love to travel and passing by gossip with friends.

Post a Comment

Please do not enter any spam link in the comment box

Previous Post Next Post