আমরা কি করোনামঙ্গলের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছি?

[ad_1]

‘কলেরা নিয়ে একটি গল্পই তখন বারবার শুনতাম। কালো রঙের এক বুড়ি হাতে একটা পুঁটলি নিয়ে বিরাট এক মাঠ পাড়ি দিচ্ছে। কোথাও কেউ নেই। সেই বুড়ি ছুটছে, ছুটছে...। ওই বুড়িই হলো ওলাবিবি। কলেরার দেবী। বলা হতো, ওলাবিবি কোনো গ্রামের ওপর নজর দিলেই সেই গ্রামে কলেরার মড়ক লাগে। তাই কোনো গ্রামে কলেরা শুরু হলে মানুষ বলত, তোমরা ওলাবিবিকে দেখেছ নাকি?’


ওপরের উদ্ধৃতিটি হাসান আজিজুল হকের একটি লেখার। লেখাটা এই সেদিন প্রকাশিত হলো ‘প্রথম আলো’র ‘অন্য আলো’তে। করোনা মহামারির কালে দেশের জ্যেষ্ঠ এই কথাসাহিত্যিকের ‘মারি নিয়ে ঘর করি’ শীর্ষক লেখার শিরোনামটি নেওয়া হয়েছে সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতা থেকে—‘মন্বন্তরে মরিনি আমরা মারি নিয়ে ঘর করি,/ বাঁচিয়া গিয়েছি বিধির আশীষে অমৃতের টিকা পরি।/দেবতারে মোরা আত্মীয় জানি, আকাশে প্রদীপ জ্বালি,/ আমাদেরি এই কুটিরে দেখেছি মানুষের ঠাকুরালি।’


দেব-দেবতার সঙ্গে বাংলার মানুষের আত্মীয়তা আবহমানকালের। এ বিষয়ে বাংলা সাহিত্যের সূত্রেও ধারণা নেওয়া যেতে পারে। যদিও আমি সাহিত্যের শিক্ষার্থী নই, তবু আমার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এক বন্ধুর পড়া রেকর্ড করে দিতে গিয়ে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস কিছুটা পড়েছি। এর মধ্যে মঙ্গলকাব্যের ইতিহাস বিশেষভাবে টেনেছে আমাকে। তাই মঙ্গলকাব্য পড়ে দেখবার চেষ্টাও করেছি। ইতিহাস বলে, পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে মানুষ বারবার অলৌকিক শক্তির শরণ নিয়েছে। বিশেষত মানুষ যখন কোনো উপায়হীন হয়ে পড়েছে, তখন অসহায়ত্ব, ভয়-ভীতি, বিপদ থেকে রক্ষার জন্য অলৌকিক শক্তির আশ্র‍য় নিয়েছে। যেমন সাপ থেকে রক্ষা পেতে মনসাদেবীর পূজা করা হতো। বনের বাঘ থেকে রক্ষা পেতে এখনো বনবিবির আরাধনা করে সুন্দরবন অঞ্চলের বনজীবীরা। তেমনি বিভিন্ন রোগ-বালাই থেকে রক্ষা পেতে অনেক দেবদেবীর সৃষ্টি করেছে মানুষ। কলেরা থেকে রক্ষা পেতে ওলাদেবী আর বসন্ত থেকে রক্ষার জন্য শীতলা দেবীর উপাসনা করেছে। এই সব দেব-দেবীর কাহিনি আমরা মঙ্গলকাব্যে পাই।


বাংলা সাহিত্যের ঐতিহ্যবাহী ধারা মঙ্গলকাব্য রচিত হয়েছিল মধ্যযুগে। এ ধারার প্রধান কাব্যগুলো হলো, ‘মনসামঙ্গল’, ‘চণ্ডীমঙ্গল’, ‘অন্নদামঙ্গল’। তা ছাড়া আছে ‘শীতলামঙ্গল’ও। তবে সাহিত্যের ইতিহাসে অন্য মঙ্গলকাব্যগুলোর মতো অতোটা গুরুত্ব পায়নি ‘শীতলামঙ্গল’। কিন্তু মারি-মড়কের বাস্তবতায় এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লৌকিক দেবী শীতলার সঙ্গে বসন্ত রোগের সম্পর্ক আছে বলে লোকবিশ্বাস রয়েছে। একসময় গ্রামবাংলায় বসন্তের প্রাদুর্ভাব হতো মাঝেমধ্যেই। শীতলার আরাধনায় জ্বালা জুড়িয়ে দেহ শীতল হয়, এমন বিশ্বাস থেকেই দেবীর নাম হয় শীতলা।


বসন্ত রোগে মানুষের মৃত্যুর একটা চিত্র পাওয়া যায় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসের শুরুতেই—‘গৃহে গৃহে বসন্তে মরিতে লাগিল। কে কাহাকে জল দেয়, কে কাহাকে স্পর্শ করে। কেহ কাহার চিকিৎসা করে না; কেহ কাহাকে দেখে না; মরিলে কেহ ফেলে না। অতি রমণীয় বপু অট্টালিকার মধ্যে আপনা আপনি পচে। যে গৃহে একবার বসন্ত প্রবেশ করে, সে গৃহবাসীরা রোগী ফেলিয়া পলায়।’


এটা ১৭৭৬ সালের মারি বা মড়কের বিবরণ। এরপর কেটে গেছে বহুকাল। ১৯১৪ সালে প্রকাশিত হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস ‘চতুরঙ্গ’। এই উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘পাড়ায় প্লেগ দেখা দিল। পাছে হাসপাতালে ধরিয়া লইয়া যায় এজন্য লোকে ডাক্তার ডাকিতে চাহিল না। জগমোহন স্বয়ং প্লেগ-হাসপাতাল দেখিয়া আসিয়া বলিলেন, ব্যামো হইয়াছে বলিয়া তো মানুষ অপরাধ করে নাই।’


যখন মানুষ মানুষকে ছেড়ে যায়, সমাজ-রাষ্ট্রসহ পার্থিব কোনো শক্তি তাকে সহযোগিতা করে না, তখনই অলৌকিকের শরণ নেয় মানুষ, চোখের সামনে ওলাদেবীর মতো কল্পনা বাস্তব হয়ে আসে। শীতলাকে তুষ্ট করার জন্য রচিত হয় ‘শীতলামঙ্গল’ কাব্য। করোনা থেকে রক্ষার জন্য নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষ এখন নিজ নিজ ঈশ্বরের কাছে প্রর্থনারত। তাই ভাবছি, আমরা কী করোনামঙ্গল কাব্যের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছি?


১৯১৪ সালের ওই প্লেগ হাসপাতালের সঙ্গে বাংলাদেশের এখনকার করোনা হাসপাতালগুলোর কোনো পার্থক্য নেই। অবশ্য বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশের আর দোষ কী, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বেলায়ও তো দেখা যাচ্ছে, সমৃদ্ধির পাহাড়চূড়ায় আসীন দেশ দুটিও করোনা ঠেকাবার ন্যূনতম প্রস্তুতিহীন অবস্থায় হাসফাঁস করে মরছে। আমাদের দেশে সরকারি-বেসরকারি, ছোট-বড় মিলিয়ে হাসপাতাল আছে প্রায় ছয় হাজার। কিন্তু এই সব হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট নেই যথেষ্ট পরিমাণে। তেমন ব্যবস্থা নেই ভেন্টিলেটর ও সার্বক্ষণিক অক্সিজেন সরবরাহের। অভাব রয়েছে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরও। তারপরও যাঁরা হাসপাতালগুলোতে কাজ করছেন, তাঁদের সুরক্ষার ব্যবস্থা অপ্রতুল। প্রাথমিক পর্যায়ে হাসপাতালে এন-৯৫ নামে যে মাস্কগুলো পাঠানো হয়েছিল সেগুলো ছিল নকল। ফলে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে বেড়ে যায় আক্রান্তের সংখ্যা। চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটিসের (এফডিএসআর) হিসাব অনুযায়ী, ইতিমধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক হাজারের বেশি চিকিৎসককে শনাক্ত করা হয়েছে। এখন অব্দি করোনায় আক্রান্ত হয়ে এবং করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ৩৬ জন চিকিৎসক। এই যখন পরিস্থিতি, তখন হাসপাতালে ঠাঁই পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে মানুষের।


এ অবস্থায় মানুষই মানুষকে অভয় দিচ্ছে, এবং সেই অভয় দেওয়ার ছবিতে ভরে যাচ্ছে আমাদের ফেসবুকের নিউজফিড। যেমন আজ ‘প্রথম আলো’র আলোকচিত্রী শুভ্র কান্তি দাশের একটি ছবি মানুষের অন্তর ছুঁয়ে গেছে। এ ছবিতে দেখা যায় অসুস্থ স্ত্রী রোমানাকে অভয় দিচ্ছেন তাঁর স্বামী। ছবিটি এই দুঃসহকালে বেঁচে থাকতে আমাদের অনুপ্রাণিত করে। আমাদের সাহস যেগায়।


আরেকটি ছবির কথা বলি। মাত্র সপ্তাহ দেড়েক আগে মুগদা জেনারেল হাসপাতালের বাইরে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার জন্য আসা বাবু বাজারের চা বিক্রেতা আল আমীনকে জ্ঞানহীন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছি। বড়বোনকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন আল আমীন। সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ভাইকে ফেলে বোনটি চলে যান। ‘দেশ রূপান্তর’ পত্রিকার আলোকচিত্রী রুবেল রশীদের তোলা আল আমীনের সেই ছবি ব্যপক আলোচিত হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তিনি কেবল ছবিই তোলেননি, আল আমীনকে সুশ্রুষা দিয়ে সুস্থও করেছেন। নিঃসন্দেহে অনেক মানবিক একটি কাজ করেছেন রুবেল রশীদ। যুদ্ধিবধ্বস্ত সুদানের দুর্ভিক্ষের একটি ছবি তুলে বিখ্যাত হয়েছিলেন সাংবাদিক কেভিন কার্টার। এক শিশু খাবারের সন্ধান করছে, পেছনে শকুন—ছবিটির জন্যে কেভিন কার্টার পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছিলেন। তবে পুরস্কার পাওয়ার চার মাস পর তিনি আত্মহত্যা করেন। তাঁর অনুশোচনা জন্মেছিল, কেননা ছবি তোলার জন্য দীর্ঘ সময় ব্যয় না করে শিশুটিকে বাঁচাতে উদ্যোগী হতে পারতেন তিনি।


সংজ্ঞাহীন আল আমীনকে সাহায্য করাটা রুবেলের ব্যক্তিগত মানবিক মূল্যবোধের উৎকর্ষ প্রমাণ করে। কিন্তু ওই অসুস্থ আল আমীনের চিকিৎসা করানোটা রাষ্ট্রের দায়, হাসপাতালের দায়। সেই দায় পালন না করাটা অপরাধের। রোগীরা এসে হাসপাতালের বাইরে উদ্বেগ নিয়ে বসে থাকেন। হাসপাতাল রোগী ভর্তি করতে পারছে না। রোগীর স্বজনকে রোগী রেখে চলে যেতে বাধ্য হয় বা হচ্ছে। কোনো বোন তাঁর অসুস্থ ভাইকে ফেলে চলে যায় কখন?


দিনাজপুরে উনত্রিশ বছর বয়সী কমল চন্দ্রের মৃতদেহ সৎকারের দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ভাবনার প্রধান নির্বাহী মুস্তাফিজুর রহমান রূপমসহ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সাত জনের একটি দলকে, যাদের কেউ সনাতন ধর্মাবলম্বী নন। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের শেষকৃত্য করছেন এই মানুষগুলো। পত্রিকায় প্রকাশের পর কৌতূহলী হয়ে আমি যোগাযোগ করি ওই দলটির দলনেতা মুস্তাফিজুর রহমান রূপমের সঙ্গে। তিনি আমার আত্মীয় হন। তাঁর কাছে তাঁর দলের অন্য ছয় জনের নাম জানাননি কেন, জিজ্ঞেস করে যে উত্তর পাই, তা আমাকে বিস্ময়ে বিমূঢ় করে রাখে দীর্ঘ সময়। তিনি বললেন, ওই ছয় জনের কেউ তাঁদের নাম জানাতে চান না।


কেন তাঁরা নাম জানাতে নারাজ? রূপম বললেন, তাঁদের প্রায় সবাই ভাড়া বাড়িতে থাকেন। চাকরি-বাকরি করেন। নাম জানাজানি হলে সংকটে পড়তে পারেন। এই তথ্য আমাকে ব্যথিত করে। নিজেদের প্রাণসংশয় হতে পারে জেনেও যাঁরা মৃতকে শেষ বিদায় জানাবার কঠিন দায় কাঁধে তুলে নিয়েছেন, তাঁদেরও নাম গোপন রাখতে হয়?


ইঙ্গমার বার্গম্যানের ‘সেভেন্থ সিল’ চলচ্চিত্রের সেই ছোট মেয়েটি, যাকে ডাইনি আখ্যা দেওয়া হয়েছিলকমলের মৃত্যুর দায় কার? করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর লকডাউনের মধ্যে গার্মেন্টস খুলে দেওয়ায় চাকরি বাঁচাতে রাজধানী ঢাকায় নিজ কর্মস্থলে ছুটে আসতে হয়েছিল কমলকে। কর্মস্থলে এসে জ্বর-সর্দি নিয়ে ফিরে যান গ্রামের বাড়ি। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান কমলের স্ত্রী। সেখানেই মারা যান কমল। কমলের স্ত্রী লাশ রেখে চলে যান।


দিনাজপুরের লাশ দাফনকারী ওই দলটি যখন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ৪৫ বছর বয়সী ময়নার লাশ কবর দিচ্ছিলেন, তখন দূরে দাঁড়িয়ে মাকে শেষ বিদায় জানিয়েছিলেন তাঁর ছেলে।


এই সব মৃত্যুর জন্য কে দায়ী? মহামারি। কিন্তু মহামারির এমন ভয়াবহ সংক্রমণের জন্য কাকে দায়ী করব? হঠাৎ গার্মেন্টস খুলে দেওয়ায় চাকরি বাঁচাতে যে কমলকে ঢাকায় ছুটে আসতে হয়েছিল, তাঁর মৃত্যুতে রাষ্ট্রের দায় কতটা? রাষ্ট্র যখন দায়-দায়িত্বহীন আচরণ করছে, তখন মানুষ ভবিতব্যের হাতে নিজেকে সমর্পণ করছে।


ইঙ্গমার বার্গম্যানের ‘সেভেন্থ সিল’ চলচ্চিত্রের সেই ছোট মেয়েটার কথা মনে পড়ছে, যে মেয়েকে ডাইনি আখ্যা দিয়ে শয়তানের সহচর বলে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। নিজেকে বাঁচাতে মেয়েটি ডেভিলের প্রতি বিশ্বাস এনেছিল। ছবির নায়ক অ্যান্তোনিও ব্লক জিজ্ঞেস করেছিল, ডেভিলের সঙ্গে মেয়েটির কী কথা হয়? মেয়েটি ঠিকঠাক উত্তর দেয়নি। বলেছিল, ‘আগুন আমাকে কিছু করতে পারবে না। সে আমার আশে-পাশেই আছে।’ এই সে টা কে? শয়তান? মারা যাওয়ার আগে ব্ল্যাক ডেথকে দেখতে পায় মেয়েটি। তার প্রবল বিশ্বাস ছিল, ডেভিল তাকে বাঁচাবে। সে বলেছিল, ‘ডেভিলকে দেখতে হলে আমার চোখের দিকে তাকাও।’ যখন ব্ল্যাক ডেথ থেকে মানুষ বাঁচতে পারে না, তখন আমি ওলাদেবীর চিত্রকল্পটা দেখতে পাই। ওলাদেবী এসে দাঁড়ায় আমাদের সামনে। যখন মানুষ মানুষকে ছেড়ে যায়, সমাজ-রাষ্ট্রসহ পার্থিব কোনো শক্তি তাকে সহযোগিতা করে না, তখনই অলৌকিকের শরণ নেয় মানুষ, চোখের সামনে ওলাদেবীর মতো কল্পনা বাস্তব হয়ে আসে। শীতলাকে তুষ্ট করার জন্য রচিত হয় ‘শীতলামঙ্গল’ কাব্য। করোনা থেকে রক্ষার জন্য নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষ এখন নিজ নিজ ঈশ্বরের কাছে প্রর্থনারত। তাই ভাবছি, আমরা কী করোনামঙ্গল কাব্যের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছি?



[ad_2]

Source link
IRFAN H

Hi, This is IrfanH I love to travel and passing by gossip with friends.

Post a Comment

Please do not enter any spam link in the comment box

Previous Post Next Post