‘নিষিদ্ধ’ সফরের ক্রিকেটারদের ভিসা দেয়নি ভারত

[ad_1]

গ্রাহাম গুচসহ আরও সাত ইংলিশ ক্রিকেটার দক্ষিণ আফ্রিকায় নিষিদ্ধ সফরে গিয়েছিলেন। সে কারণেই ১৯৮৮ সালে তাদের ভিসা দেয়নি ভারত। ছবি: এএফপিসেই গ্রীষ্মটা ছিল ইংলিশ ক্রিকেটের জন্য ভয়াবহ। অবশ্য বাজে সময় যাচ্ছিল তাদের অনেক দিন ধরেই। ভাবা যায়, ইংল্যান্ডের মতো ক্রিকেট শক্তি ১৯৮৬ ও ১৯৮৭ সালে ঘরের মাঠে ১৪টি টেস্টের ১১টিতেই হেরেছে!


আর তাই ১৯৮৮ সাল ছিল ইংল্যান্ড ক্রিকেটের জন্য মারাত্মক অস্থির একটা বছর। ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাদের ৪–০ ব্যবধানে টেস্টে হারিয়ে দেয়। ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সংস্করণ টেস্ট ক্রিকেট অ্যান্ড কাউন্টি বোর্ড (টিসিসিবি) ক্যারিবীয়দের বিপক্ষেই এক সিরিজে ৩ অধিনায়কে নিয়োগ দিয়ে অস্থিরতার মাত্রাটা আরও প্রকট করে তোলে। এই বিপর্যয়কর অবস্থার চূড়ান্ত পরিণতি ঘটে সে বছরের ভারত সফরে।


৮ ইংলিশ ক্রিকেটারকে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানায় ভারত সরকার। ফলে বছরের শেষ দিকের সেই সফরও বাতিল করতে হয়।


ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ডকে নেতৃত্বে দিয়েছিলেন মাইক গ্যাটিং। এরপরের দুই টেস্টে ছিলেন অফ স্পিনার জন এম্বুরি। সিরিজটি শেষ হয় ক্রিস কাউড্রের অধিনায়কত্ব দিয়ে। ক্যারিবীয় সিরিজের পর অধিনায়কত্ব দেওয়া হয় গ্রাহাম গুচকে। গুচ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরের মাঠে তাঁর প্রথম অ্যাসাইনমেন্টে সফল হলেও এই গুচের কারণেই মূলত ভারত সরকার ইংল্যান্ডের ৮ ক্রিকেটারকে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানায়।


ইংলিশ ক্রিকেটারদের এই ভিসা সমস্যার মূলে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। বর্ণবাদের কারণে সে সময় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একঘরে দেশটি। খেলাধুলার দুনিয়া থেকেও নির্বাসিত। সে সময় বর্ণবাদের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সনদে সই করা অনেক দেশের সঙ্গেই কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল না দক্ষিণ আফ্রিকার। ভারত সরকারও জাতিসংঘের বর্ণবাদ বিরোধী সনদের প্রতি সম্মান রেখেই দক্ষিণ আফ্রিকায় বিদ্রোহী সফর করা ইংলিশ ক্রিকেটারদের ভিসা দিতে রাজি হয়নি।


‘বিদ্রোহী সফর’ নিয়ে নিয়ে কিছু কথা বলা উচিত। ১৯৮৮ সালে নতুন নিয়োগ পাওয়া ইংলিশ অধিনায়ক গুচ এক নিষিদ্ধ সফরে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে খেলেছিলেন। ইতিহাসে সেটিকেই বিদ্রোহী সফর বলা হয়। সে সফরের জন্য গুচকে ৩ বছরের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। কেবল গুচই নন, কিম বার্নেট, অ্যালান ল্যাম্ব, ফিলিপ নিউপোর্টের মতো ক্রিকেটাররা এরপর বিভিন্ন সময় দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে খেলায় তাদের কালো তালিকাভুক্ত করে জাতিসংঘ। এই কালো তালিকায় আরও ছিলেন জন এম্বুরি, গ্রাহাম ডিলি, রবার্ট বেইলি এবং রবার্ট রবিনসন। ১৯৮৮ সালে গ্রাহাম গুচের নেতৃত্বাধীন যে ইংলিশ দলটি ভারত সফরের জন্য ঘোষণা করা হয়েছিল, এই ক্রিকেটাররা সবাই ছিলেন সে দলে।


কোনো দেশের কূটনীতি, আন্তর্জাতিক নীতি যে ক্রিকেটের মতো একটি খেলার চেয়েও অনেক বড় কিছু। ইংলিশ ক্রিকেটারদের ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে সেটাই প্রমাণ করে দিয়েছিল ভারত সরকার। সে সময় টিসিসিবি কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে ক্রিকেটারদের ভিসা করাতে ব্যর্থ হয়েছিল। লন্ডনে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার পুরো বিষয়টিকেই ‘স্বাভাবিক প্রক্রিয়া’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। ভারত সরকারের গৃহীত নীতির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছিল কমনওয়েলথও।


টিসিসিবি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে বেশ কয়েক দফায় বৈঠকে বসেও ভিসার ব্যাপারে কোনো আশ্বাস বাণী পায়নি। কারণ পুরো বিষয়টিই তখন ভারতের আন্তর্জাতিক বিষয়ে রাষ্ট্রীয় নীতির পর্যায়ভুক্ত। আট ইংলিশ ক্রিকেটারের ভিসার ব্যাপারে তখন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের করণীয় কিছু ছিল না বললেই চলে। শেষ পর্যন্ত সফরটি বাতিল ঘোষণা করতে হয়।


ভারতের দক্ষিণ আফ্রিকা নীতির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছিল পাকিস্তানও। প্রশ্ন উঠতে পারে ইংল্যান্ড ও ভারতের একটি দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট সফরের ব্যাপারে পাকিস্তান এল কী করে! ভারত সফর বাতিল হওয়ার টিসিসিবি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে সফরের জন্য। দুই টেস্ট ও একটি ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজের ব্যাপারে আলোচনাও প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। ত্রিদেশীয় সিরিজের তৃতীয় দল হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয় পাকিস্তানকে। কিন্তু পাকিস্তান ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে অস্বীকৃতি জানায়। দক্ষিণ আফ্রিকা প্রশ্নে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা—দক্ষিণ এশিয়া ও কমনওয়েলথভুক্ত এই দেশগুলোর নীতি ছিল একই।


বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ৩২ বছর আগের এই ঘটনা দুর্দান্ত এক ইতিহাসই!



[ad_2]

Source link
IRFAN H

Hi, This is IrfanH I love to travel and passing by gossip with friends.

Post a Comment

Please do not enter any spam link in the comment box

Previous Post Next Post