করোনা চিকিৎসায় অপ্রয়োজনীয় ওষুধ বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি

[ad_1]

খুলনা জেলার সুন্দরবনসংলগ্ন একটি উপজেলায় এ পর্যন্ত ১০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। ওই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে ৩ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। বাকিদের বাড়িতে চিকিৎসা চলছে। 


ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, একজনের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ছিল। তাঁকে সেই সমস্যার চিকিৎসা ও ওষুধ দেওয়া হয়েছে। বাকিদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এমন ওষুধ দেওয়া হয়েছে। যেমন, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, আয়রন ও ভিটামিন–সি।


কক্সবাজার জেলার একটি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মকর্তা অবশ্য অন্য কথা বলেছেন। ওই উপজেলায় ম্যালেরিয়া সারাতে ব্যবহৃত হয় এমন ওষুধসহ অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কোভিড–১৯ রোগীদের। করোনা শনাক্ত হওয়ার আগেই সর্দি, জ্বর, গলাব্যথা নিয়ে আসা রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকেরা।


দেশের দুই উপজেলায় দুই সরকারি হাসপাতালে একই রোগের দুই রকম চিকিৎসা চলছে। তবে এই ভিন্নতা শুধু প্রান্তিক দুই এলাকাতেই নয়, রাজধানীসহ সারা দেশে এটা চলছে। মহামারি সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ভয়ের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। করোনায় যেন আক্রান্ত না হয়, আক্রান্ত হলে যেন অবস্থা খারাপের দিকে না যায় সে জন্য মানুষ ওষুধ খাচ্ছে। অনেকে অপ্রয়োজনীয় ওষুধ খাচ্ছে।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ মানুষ বা রোগীদের পক্ষ থেকে ওষুধের ব্যাপারে চাহিদা ও চাপ আছে। এতে অ্যান্টিবায়োটিকসহ অপ্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবহার বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিছু ওষুধে উপকার হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে, তবে নিশ্চিত স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে। মানুষ ঝুঁকি নিয়ে ওষুধ খাচ্ছে। কোভিড–১৯ মহামারির মতো ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও মহামারি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’


করোনার সুনির্দিষ্ট ওষুধ নেই


গত বছর ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে অজ্ঞাত কারণে কিছু মানুষ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। বিজ্ঞানী, গবেষক ও চিকিৎসকেরা জানতে পারেন নিউমোনিয়ার পেছনে আছে একটি নতুন ভাইরাসের সংক্রমণ। জিন বিশ্লেষণ করে নতুন এই ভাইরাসের সঙ্গে মার্স বা সার্স ভাইরাসের অনেক মিল খুঁজে পান বিজ্ঞানীরা। পরে এই ভাইরাসজনিত রোগকে কোভিড–১৯ নাম দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।


কোভিড–১৯ শ্বাসতন্ত্রের রোগ। রোগটি নিরাময়ে এখনো কোনো দেশে কোনো ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই রোগ নিরাময়ে সক্ষম এমন কোনো ওষুধের নাম এখনো ঘোষণা করেনি। এই রোগ নিরাময়ে সুনির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই।


সুনির্দিষ্ট ওষুধ না থাকলেও করোনা চিকিৎসায় অনেক ওষুধ ব্যবহৃত হচ্ছে। এর বেশ কিছু অপ্রয়োজনীয় ও ঝুঁকিপূর্ণ। জাতীয় নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড–১৯ চিকিৎসায় সদস্যদেশগুলোর জন্য চিকিৎসা নির্দেশিকা তৈরি করেছে। ২৭ মে তার হালনাগাদ সংস্করণও প্রকাশ করেছে। সেই নির্দেশিকায় এই ভাইরাস দমন করতে কোনো ওষুধের সুপারিশ করা হয়নি। কিছু ওষুধ বা ব্যবস্থার সুপারিশ তারা করেছে শুধু ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়েল’ বা পরীক্ষা–নিরীক্ষার জন্য।


বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় কোভিড–১৯ চিকিৎসায় একটি জাতীয় নির্দেশিকা তৈরি করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুসরণ করে তা তৈরি করা। তাতেও কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ ব্যবহারের কথা বলা হয়নি।


ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক খান আবুল কালাম আজাদ বলেন, চীনে এবং পরবর্তী সময়ে আরও কয়েকটি দেশে কোভিড–১৯ চিকিৎসায় বেশ কিছু ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা হয়েছিল। কয়েকটি ক্ষেত্রে সামান্য সাফল্য দেখা যাওয়ার পর কিছু ওষুধের নাম সামনে চলে আসে। অনেক দেশেই সেই ওষুধ ব্যবহারে কিছু চিকিৎসক ও প্রতিষ্ঠান উৎসাহী হয়ে ওঠে। এ দেশেও সেই প্রবণতা আছে। কিন্তু সেই সাফল্য সর্বজনীন ছিল না বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোনো ওষুধেরই অনুমোদন দেয়নি।


করোনায় চিকিৎসা আছে


ওষুধ না থাকলেও করোনার চিকিৎসা আছে। এই রোগে আক্রান্ত হলে সাধারণভাবে সর্দি, জ্বর, গলাব্যথা, কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ৪০ শতাংশ রোগীর লক্ষণ থাকে মৃদু, ৪০ শতাংশ রোগীর লক্ষণ মাঝারি। এই ৮০ শতাংশের চিকিৎসা হবে লক্ষণ দেখে। অর্থাৎ জ্বর হলে জ্বর কমানোর ওষুধ, কাশি দেখা দিলে কাশি দমনের ওষুধ। ওষুধ হবে উপসর্গভিত্তিক। ওষুধ যা–ই হোক, তা হতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। এই চিকিৎসা বাড়িতে হতে পারে, হাসপাতালেও হতে পারে।


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ১৫ শতাংশের ক্ষেত্রে উপসর্গ তীব্র হতে পারে। বাকি ৫ শতাংশের ক্ষেত্রে তীব্র উপসর্গসহ পরিস্থিতি জটিল হতে পারে। দুটি ক্ষেত্রেই চিকিৎসা হবে সহায়তামূলক (বা সাপোর্টিভ ট্রিটমেন্ট)। যেমন: রক্তে দ্রবীভূত অক্সিজেন কমে গেলে রোগীকে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হবে। রোগীর যদি নিউমোনিয়া দেখা দেয় নিউমোনিয়ার চিকিৎসা দিতে হবে। রোগীর যদি অন্য কোনো সমস্যা থাকে তা হলে সেই সমস্যার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা বা ওষুধ অব্যাহত রাখতে হবে। জটিল এই দুটি ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ দরকার হয়, তাই হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নেওয়াই শ্রেয়।


কে কী চিকিৎসা দিচ্ছেন


রাজধানীর ১৪টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে এবং আট বিভাগের ৬৪টি হাসপাতালে কোভিড–১৯ রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে। গতকাল এসব হাসপাতালে ৯ হাজারের কিছু বেশি রোগী ভর্তি ছিলেন।


বাড়িতে চিকিৎসাধীন রোগীদের একটি বড় অংশ ৩৩৩ বা ১৬২৬৩ নম্বরে ফোন করে চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিদিন কোভিড–১৯ চিকিৎসা বা পরামর্শের জন্য দেড় লাখের বেশি মানুষ ফোন করছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামূলক সংগঠনের কাছে ফোন করে মানুষ চিকিৎসা নিচ্ছেন। দেশের বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বা শ্বাসতন্ত্রের রোগ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে দেখা করে বা ফোন করে বহু মানুষ চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ছাড়া ফেসবুক ও অনলাইনে অনেকে করোনা চিকিৎসার পরামর্শ ও ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন।  


বেশ কয়েকজন রোগী, একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সব ক্ষেত্রে চিকিৎসা এক হচ্ছে না। একই বয়সী দুজন রোগী কাছাকাছি সময় ঢাকার দুটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। দুজনের শারীরিক সমস্যা একই ছিল। দুজনই এখন সুস্থ। এঁদের একজনকে নিয়মিত উচ্চমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়েছিল। অন্যজনকে দেওয়া হয়েছিল শুধু জ্বর ও সর্দির ওষুধ। বাড়িতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়া তিনজন রোগীর সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়েছে। তিনজনের ওষুধের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য। একজনের প্রধান ওষুধ ছিল জ্বর ও কাশি নিরাময়ের। একজনের ছিল প্রচুর অ্যান্টিবায়োটিক। বাকিজনের ছিল ভাইরাস দমনের ওষুধ।


কেন এমন হচ্ছে—এই প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ মেডিসিন সোসাইটির মহাসচিব অধ্যাপক আহমেদুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব রোগী যেমন এক ধরনের না, প্রত্যেক চিকিৎসকের প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা এক থাকে না। তাই ব্যবস্থাপত্রে তারতম্য হওয়া স্বাভাবিক।’ তবে পার্থক্য আকাশ–পাতাল হলে কোথাও সমস্যা হচ্ছে এটা ধরে নেওয়া যেতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।


আহমেদুল কবির আরও বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত নয়, জাতীয়ভাবেও অনুমোদিত নয়, এমন ওষুধ ব্যবহারে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার নজির পাওয়া গেছে। এটা বন্ধ করার উপায় খুঁজতে হবে।


অপ্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহারে দুটো ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করেন অধ্যাপক সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, বিশ্বের কোথাও ব্যবহার করে উপকার পাওয়া যায়নি, এমন ওষুধের নাম ব্যবস্থাপত্রে লেখা হচ্ছে। এতে প্রথমত অপ্রয়োজনে ওষুধের জন্য অর্থ ব্যয় হচ্ছে। দ্বিতীয়ত নিশ্চিতভাবে অন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। এই ওষুধ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘প্রায় প্রতিটি ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। কোভিড–১৯ আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে সেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, তা এখনো অজানা। তাই অপ্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবহার বন্ধ হওয়া জরুরি।’


করণীয়


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা ও জাতীয় নির্দেশনা অনুসরণ করে করোনা চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। নির্দেশনা মানলে অপ্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবহার কম হবে, মানুষের ঝুঁকি কমবে।


এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পেশাজীবী সংগঠন সবারই ভূমিকা আছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক খান আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের সময় জাতীয় নির্দেশিকা ব্যবহারের ওপর জোর দিতে হবে। বাংলাদেশে মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনও সব সদস্যদের নির্দেশিকা অনুসরণ করার কথা বলতে পারে।’



[ad_2]

Source link
IRFAN H

Hi, This is IrfanH I love to travel and passing by gossip with friends.

Post a Comment

Please do not enter any spam link in the comment box

Previous Post Next Post