এত কঠিন সময়ে এবং এত অনিশ্চয়তা ও দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে জাতীয় বাজেট তৈরির কোনো নজির আছে বলে মনে হয় না। জনস্বাস্থ্যের দিক থেকে কোভিড-১৯ মহামারি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা বোঝা যাচ্ছে না। সে কারণে অর্থনীতিকে ঝুঁকিমুক্ত ও পুনরুদ্ধার করার যেকোনো পরিকল্পনা একান্তই অনুমাননির্ভর হতে বাধ্য। অর্থমন্ত্রী বাজেটের শিরোনাম ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যতের পথপরিক্রমা’ দিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন; কিন্তু আসলে অন্ধকারে হাতড়ে ফেরার মতো তাঁর অবস্থা দেখে সমবেদনাই জানাতে হয়। এই মুহূর্তে অর্থনীতির স্থবিরতা ও মন্দা কোন পর্যায়ে দাঁড়াবে, তা অনিশ্চিত। মহামারির বিস্তার পর্যবেক্ষণে রেখে জীবন ও জীবিকা রক্ষার পদক্ষেপগুলোর মধ্যে কীভাবে ভারসাম্য রক্ষা করা যায়; সেটাই আশু নীতিনির্ধারণের বিষয়। বাজেটের খাতওয়ারি বরাদ্দের একটা বড় ভূমিকা অবশ্যই আছে, কিন্তু তার জন্য দরকার সংকট মোকাবিলার একটা জাতীয় সমন্বিত কৌশল, যা এখনো দেখা যাচ্ছে না।
প্রস্তাবিত বাজেটের বরাদ্দে সংগত কারণেই যে বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তা হলো কোভিড-১৯ মহামারির বিবেচনায় জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা, খাদ্যনিরাপত্তাসহ সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থা বিস্তৃত ও জোরদার করা এবং কৃষি ও কৃষিবহির্ভূত বিভিন্ন ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য নানা ধরনের ভর্তুকি ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করা। প্রশ্ন হলো, এই অর্থ বরাদ্দ কি লক্ষ্য অর্জনের জন্য যথেষ্ট? এমনকি যদি মনে করা যায় যে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অর্থের নানা অপচয় ও দুর্নীতিকে আয়ত্তের মধ্যে রাখা যাবে। বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলোকে সম্প্রসারণ ও বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব আছে। তবে এ বরাদ্দ যথেষ্ট হবে কি না সন্দেহ আছে, বিশেষত যদি কর্মহীন হয়ে নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাওয়া পরিবারগুলোকে হিসাবে নেওয়া হয়। কিছু সমীক্ষা থেকে দেখা গেছে, এসব সদ্য গরিব হয়ে যাওয়া মানুষকে বিবেচনায় নিয়ে প্রান্তিক পরিবারগুলোর ন্যূনতম বেঁচে থাকার চাহিদা মেটাতে হলে সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয় জিডিপির ৪ শতাংশ পর্যন্ত দরকার হতে পারে। সেটা অবশ্য নির্ভর করবে মহামারি কীভাবে বিস্তার লাভ করে এবং তা রোধের জন্য কত শক্তভাবে বিভিন্ন সামাজিক দূরত্বের নিয়মগুলো কার্যকর করা হয়। এখানেই জীবন ও জীবিকা রক্ষার দ্বন্দ্বের প্রশ্নটি আসে।
লেখক, উপদেষ্টা,সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার
[ad_2]
Source link