করোনা পজিটিভ আসার পর দ্বিতীয়বার নমুনা পরীক্ষা করাতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন চট্টগ্রামের আক্রান্ত বাসিন্দারা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দ্বিতীয়বার নমুনা নেওয়া হচ্ছে না। তাদের বলে দেওয়া হচ্ছে দ্বিতীয়বার নমুনা পরীক্ষার দরকার নেই। এর ফলে অনেকেই নিশ্চিত হতে পারছেন না—তাদের শরীরে করোনাভাইরাস আর আছে কি না? এমন পরিস্থিতিতে তাঁরা ঘুরপাক খাচ্ছেন তিনটি প্রশ্নে—আইসোলেশনে থাকবেন? থাকলেও কতদিন থাকবেন? না সবার সঙ্গে মিশবেন?
দ্বিতীয়বার নমুনা পরীক্ষা করার পরেও অনেকের ফলাফল পজিটিভ আসার ঘটনা ঘটছে। এ কারণে নেগেটিভ রিপোর্ট না পাওয়াও একদিকে রোগীদের মধ্যে যেমন অস্বস্তি কাজ করছে তেমনি অন্যদিকে সিদ্ধান্তহীনতায়ও ভুগছেন অনেকে। বিশেষ করে যারা চাকরিজীবী তাঁরা পড়েছেন বিপত্তিতে। কারণ, এখন অনেক প্রতিষ্ঠানই আক্রান্তদের নেগেটিভ রিপোর্ট দেখিয়ে কাজে যোগ দিতে বলছে।
প্রতিদিনই চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডিতে অনেকে আসছেন দ্বিতীয়বার নমুনা দিতে। কিন্তু তাঁদের নমুনা নেওয়া হচ্ছে না। নমুনা সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা লোকজন বলে দিচ্ছেন, দ্বিতীয়বার নমুনা পরীক্ষার প্রয়োজন নেই।
দ্বিতীয়বার নমুনা দিতে না পারাদের একজন নওশীন আক্তার। ২৫ জুন তাঁর মাসহ করোনায় আক্রান্ত হন এই ব্যবসায়ী। গত বৃহস্পতিবার দ্বিতীয়বার নমুনা পরীক্ষার জন্য মাকে নিয়ে ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডিতে যান। কিন্তু তাদের নমুনা নেওয়া হয়নি।
নওশীন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, আগে পজিটিভ এসেছে। সেটি জানানোর পর আমাদের বলে দেওয়া হয় আর নমুনা নেওয়া হবে না। কেন জানতে চাইলে বলা হয় নিষেধ আছে। এরপর 'নো নিড টু সেকেন্ড টেস্ট' লিখে একটি কাগজ ধরিয়ে দেওয়া হয়।
নওশীন আরও বলেন, 'এখনো আমাদের মধ্যে কিছু উপসর্গ রয়ে গেছে। পাশাপাশি আমার এলার্জি ও মায়ের ডায়াবেটিকসের সমস্যা আছে। এখন কি আমি আমার প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কর্মী আর ক্রেতাদের সঙ্গে মিশব, না হোম আইসোলেশনে থাকব? আর আইসোলেশনে থাকলেও কতদিন থাকব বুঝে উঠতে পারছি না। আর কোনো পরীক্ষা ছাড়াতো নিজেকে সুস্থও ভাবতে পারি না।'
একইদিন দ্বিতীয়বার নমুনা পরীক্ষা করাতে বিআইটিআইডিতে গিয়েছিলেন আরও বেশ কয়েকজন। তাদের মধ্যে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মীও ছিলেন। তাঁর কর্মস্থলে রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে তা দেখাতে হবে জানিয়ে তিনি নমুনা নিতে অনেক অনুরোধ করেন। কিন্তু অন্যদের মতো তাঁরও নমুনা নেওয়া হয়নি। তিনি নাম প্রকাশ না করে প্রথম আলোকে বলেন, 'আমার এখন কোনো উপসর্গ নেই। তবে কর্মস্থল থেকে বলা হয়েছিল রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে তা নিশ্চিত করার জন্য। তারপরে কাজে যোগ দেওয়া যাবে। এখন আমি কি দেখাব?'
তবে যাদের সামর্থ আছে তারা বেসরকারি যেসব হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষা করা যাচ্ছে সেখানে ছুটছেন। বেসরকারি হাসপাতালে দ্বিতীয়বার নমুনা পরীক্ষা করা একজন প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দ্বিতীয়বার নমুনা পরীক্ষা করাতে গিয়েছিলাম। করতে পারিনি। তাই বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে করেছি। যতই বলুক দ্বিতীয়বার পরীক্ষার দরকার নেই, মনের মধ্যে তো একটা অস্বস্তি রয়েই যাবে।
এ দিকে দ্বিতীয়বার নমুনা লাগে না বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সিদ্ধান্ত সে অনুযায়ী, যারা আক্রান্ত তাদের প্রধানত দরকার ১৪দিন আইসোলেশনে থাকা। আর পজিটিভ আসার তিনদিন পর যদি আর জ্বর না আসে তখন থেকে ধরে নিতে হবে রোগী সুস্থতার পথে। তারপরেও যারা অফিসে নেগেটিভ রিপোর্ট দেখাতে হবে বলে জানাচ্ছেন, তাদের দ্বিতীয়বার নমুনা নেওয়া হচ্ছে। তবে যারা হোম আইসোলেশনে আছে তাদের আপাতত দ্বিতীয়বার নমুনা নিচ্ছি না।
দ্বিতীয়বারও অনেকের পজিটিভ আসছে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন বলেন, 'আসলেও সেটি তেমন কিছু না।তিনমাসও আসতে পারে।১৪দিন আইসোলেশনই যথেষ্ট।'
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্বাচিপের চট্টগ্রাম অঞ্চলের করোনাবিষয়ক সমন্বয়ক আ ম ম মিনহাজ উদ্দিনও মনে করেন দ্বিতীয়বার নমুনা পরীক্ষা করা জরুরি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমদিকে দ্বিতীয়বার এমনকি তৃতীয়বারও নমুনা নেওয়া হয়েছিল। তবে এখন কিট সংকট বলুন কিংবা নমুনা জমে যাওয়ার কারণে দ্বিতীয়বারও নমুনা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে দ্বিতীয়বার নমুনা নিয়ে সেটি নেগেটিভ আসাটা জরুরি। না হলে রোগীর মধ্যে অস্বস্তি কাজ করবে।
আ ম ম মিনহাজ উদ্দিন আরও বলেন, বেশিরভাগ সময় আক্রান্ত হওয়ার ১৪ দিন পর আর শরিরে করোনার অস্বীত্ব থাকে না। তবে এর উল্টো ঘটনাও আছে। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবীর করোনা আক্রান্ত হওয়ার ১৪ দিন পর দ্বিতীয়বার নমুনা পরীক্ষা দেন। এবারও তাঁর পজিটিভ আসে। তিনি দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করেছেন বলে বিষয়টি নিশ্চিত হতে পেরেছেন। তাই দ্বিতীয়বার নমুনা টেস্ট করিয়ে রোগীকে পথ দেখানো জরুরি।
[ad_2]
Source link