ডিএনসিসির ৬৯% স্থাপনায় ডেঙ্গুর উপযোগী পরিবেশ

[ad_1]

প্রথম আলো ফাইল ছবিমিরপুর ২ নম্বর সেকশনের এইচ ব্লকের ১১ নম্বর সড়কের একটি নির্মাণাধীন ভবন। গতকাল শনিবার ‘শান্তিনীড়’ নামের সেই বাড়ির নিচতলার পানির ট্যাংক, খালি বোতলসহ একাধিক জায়গায় পাওয়া গেল ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার লার্ভা। বাড়ির মালিক দুই ভাইকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। মশার ওষুধ ছিটিয়ে ধ্বংস করা হয় লার্ভাগুলো।


অভিযান পরিচালনা করা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শফিউল আজম প্রথম আলোকে বলেন, কোনো পাত্রে তিন দিন পানি জমে থাকলে এডিস মশা জন্ম নিতে পারে। এ বিষয়ে জনগণের সচেতনতা জরুরি।


আর জরিমানা দেওয়া বাড়ির মালিক মো. ইমরান বলেন, বাড়িটি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের (ডেভেলপার) মাধ্যমে করা হচ্ছে। অনেকবার বলার পরেও তারা এসব পরিষ্কার করেনি। অসতর্ক থাকায় পানি জমে ছিল।


এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ১০ দিনের বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান (চিরুনি অভিযান) চালাচ্ছে ডিএনসিসি। গতকাল ছিল অভিযানের অষ্টম দিন। অভিযান পরিচালনাকারী দুটি দলের সঙ্গে দুটি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্মাণাধীন ভবনে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। কিছু আবাসিক ভবনের পানির মিটারের ভেতরেও লার্ভা পাওয়া যায়। আর বেশির ভাগ স্থাপনাতেই এডিস মশার বংশবিস্তারের উপযোগী পরিবেশ রয়েছে। 


ডিএনসিসির গত আট দিনের অভিযানের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৬৯ শতাংশ বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার বংশবিস্তারের উপযোগী পরিবেশ পাওয়া গেছে। আর এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে ১ দশমিক ২ শতাংশ স্থাপনায়। জরিমানা আদায় করা হয়েছে ১৫ লাখ সাড়ে ৫৭ হাজার টাকা।


সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর—এই সময় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি থাকে। চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়েক দিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এটি এডিস মশার বংশবিস্তারের জন্য উপযোগী পরিবেশ। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নাগরিকদের সচেতন করা এবং এডিস মশার বংশবিস্তারের স্থান নিয়ন্ত্রণ করা না হলে করোনা মহামারির মধ্যেই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে।


গত বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা এর আগের সব বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০১৯ সালে সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৩০০ লোক প্রাণ হারিয়েছেন। আর সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ১৭৯।


স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত তিন ব্যক্তি গতকাল হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। আর চলতি বছরের ১৩ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৩১১ জন। অবশ্য তাঁদের প্রায় সবাই চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।


ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার আগেই ৫৪টি ওয়ার্ডে চিরুনি অভিযান শুরু করে উত্তর সিটি করপোরেশন। প্রতিটি ওয়ার্ডকে ১০ ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি ভাগে ৫ জনের একটি দল স্থাপনা পরিদর্শন করছে। অর্থাৎ, প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫০ জন অভিযান চালাচ্ছেন মশকনিধনকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা একসঙ্গে কাজ করছেন।


মিরপুর ১ নম্বরের টোলারবাগ এলাকায় সিটি করপোরেশনের আরেকটি দল অভিযান চালায়। মসজিদ রোডের একটি বাড়ির নিচতলার লিফটের জন্য করা ফাঁকা জায়গায় পাওয়া যায় হাজার হাজার মশার লার্ভা। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে না থাকায় জরিমানা না করে শুধু সতর্ক করা হয় বাড়ির মালিককে।


৬ জুন শুরু হওয়া অভিযানে গতকাল পর্যন্ত ঢাকা উত্তর সিটির ৫৪টি ওয়ার্ডে ১ লাখ ৭ হাজার ৬২৮টি স্থাপনা পরিদর্শন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৪ হাজার ৩০৯টি স্থাপনায় এডিস মশা বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ পাওয়া গেছে। আর এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে ১ হাজার ২৬৯টি স্থাপনায়।


ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, অভিযান শেষে কোন কোন এলাকায় এডিস মশা বংশ বিস্তার করছে, সেটির একটি তথ্যভান্ডার তৈরি করা হবে।


ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, মশার লার্ভা মারার লার্ভিসাইড ও বিকেলে উড়ন্ত মশা মারার জন্য ফগিং মেশিনে ব্যবহার করার মতো পর্যাপ্ত কীটনাশক মজুত রয়েছে। আগামী বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত চলার মতো কীটনাশক ইতিমধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে।


অভিযান পরিচালনার সময় বিভিন্ন বাসাবাড়িতে প্লাস্টিকের খালি পাত্র, বালতি, ড্রাম, অব্যবহৃত টায়ার ও কর্কশিট, ভাঙা টব, পরিত্যক্ত টিন পাওয়া যায়। দেখা যায়, নির্মাণাধীন ভবনের ভূগর্ভস্থ পানির সংরক্ষণাগার, ফেলে রাখা পাত্র, রঙের কৌটা, পাইপে জমে থাকা পানিতে এডিস মশার লার্ভা জন্মাচ্ছে।


মশার বিস্তার ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গবেষণা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, করোনাসংকটের সময়ে ডেঙ্গুসংকট দেখা দিলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে। বৃষ্টির মৌসুমে পরিত্যক্ত পাত্র যেন কোনোভাবেই বাসাবাড়িতে না থাকে। সিটি করপোরেশনের কাজের সঙ্গে নগরবাসীকে সম্পৃক্ত করতে হবে।



[ad_2]

Source link
IRFAN H

Hi, This is IrfanH I love to travel and passing by gossip with friends.

Post a Comment

Please do not enter any spam link in the comment box

Previous Post Next Post