মিস করি প্যারিস রোড

[ad_1]

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডটিকে শিক্ষার্থীরা অনেক মিস করেন। ছবি: সংগৃহীতআড়াই মাসের বেশি সময় ধরে ঘরবন্দী সময় পার করছি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো সব বন্ধ রয়েছে। ইউনেসকোর তথ্যমতে, বিশ্বের প্রায় ১৫৪ কোটি শিক্ষার্থী ক্লাসে যেতে পারছে না। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে জেনেছি, বাংলাদেশেরই প্রায় ৫ কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম থমকে গেছে।


১৬ মার্চে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। আমি ওই দিনই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী হল ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে এসেছি।



আমার কাছে ৭৫৩ একরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কতটা আপন হয়ে উঠেছে, দীর্ঘ আড়াই মাসের এই বিচ্ছেদে তা টের পেয়েছি। মতিহারের সবুজ চত্বর থেকে আরও কত দিন যে দূরে থাকতে হবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কেউ। কোভিড-১৯ রোগ এসে আমাদের ফেলে দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তায়!



৭ মার্চ বাঙালি জাতির জীবনের ঐতিহাসিক একটি দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের দেখিয়েছিলেন এক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন! সৌভাগ্যক্রমে ২০১৫ সালের এই দিনেই আমরা ৫২ জন শিক্ষার্থী মিলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে ২৫তম ব্যাচ হিসেবে ক্লাস শুরু করি। এক বুক স্বপ্ন নিয়ে সেদিন আমাদেরও শুরু হয় নবযাত্রা! ২০১৯ সালের নভেম্বরে এসে আমরা স্নাতক শেষ করেছি। ৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে মাস্টার্সের ক্লাস! ধারণা করেছিলাম, দীর্ঘ জটের পরও আগামী সেপ্টেম্বরে আমরা মাস্টার্স শেষ করতে পারব! কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, সেশনজটের ওপর এবার এসে আঘাত হেনেছে করোনাভাইরাস। আমাদের একাডেমিক জটকে আরও কয় মাস যে দীর্ঘায়িত করবে নতুন এই শত্রুটি, তা ভেবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে আমার সব সহপাঠী।


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরে আমরা ইতিমধ্যে পাঁচ বছরের বেশি সময় কাটিয়েছি। শহীদ মিনার চত্বরে স্বপ্নবান মানুষদের ভিড়, বধ্যভূমিতে বিকেলের হাঁটাহাঁটি, বুদ্ধিজীবী চত্বরের আড্ডা, পশ্চিম পাড়ার আমেজ, ইবলিশ চত্বরে প্রেমিক-প্রেমিকা যুগলের প্রেম, টুকিটাকি চত্বরের রাজনৈতিক আড্ডা, জোহা চত্বরের জ্যোৎস্নাবিলাস কিংবা কাজী নজরুল ইসলাম অডিটোরিয়ামের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান—এ সবই যেন আমাদের পরিচিত দৃশ্য। এই পাঁচ বছরে এসব দেখতে দেখতেই আমরা অভ্যস্ত। তবে এসবের চেয়েও বেশি শান্তি পেতাম সন্ধ্যারাতে কয়েক বাউণ্ডেলে বন্ধু নিয়ে প্যারিস রোডে হাঁটতে! দুপাশের বিশাল বিশাল গগন শিরীষগাছের মধ্য দিয়ে এই রাস্তায় হাঁটলে হৃদয়ে অন্য রকম এক ভালো লাগার অনুভূতি কাজ করে! এই রাস্তায় হেঁটে বেসুরে গলায় গান গাইতে গাইতে যেন আমরা পেতাম স্বর্গীয় প্রশান্তি! দিনের যেকোনো মুহূর্তেও এই প্যারিস রোড থাকে সবার আগ্রহের কেন্দ্রে! র‌্যাগ ডে, ক্লাস পার্টি থেকে শুরু করে যেকোনো প্রোগ্রামে এই রাস্তায় গিয়ে একটা ছবি তুলতে না পারলে যেন সব আয়োজন অপূর্ণই থাকে রাবিয়ানদের! বেশ চওড়া এ রাস্তার মায়ায় পড়েনি, এমন কোনো রাবিয়ান খুঁজে পাওয়া যাবে না! মর্নিং ওয়াক, সকালের মানববন্ধন, দুপুরে রিকশা-অটোরিকশার ভিড়, বিকেলের হাঁটাহাঁটি, রাতের গানের আড্ডা, মধ্যরাতের সাইক্লিং—এসবে যেন পুরোটা সময় ব্যস্ত থাকতে হয় এই রাবিয়ানদের প্রিয় প্যারিস রোডটিকে।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোড। ছবি: লেখকরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বিজ্ঞান ভবনের তৃতীয় তলায় আমাদের ফার্মেসি বিভাগ। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সেখানে ক্লাস আর প্র্যাকটিক্যাল করতে করতে হবু ফার্মাসিস্টরা ক্লান্ত হয়ে পড়ে! সেই ক্লান্তি দূর করে শান্তির পরশ পেতে ক্যাম্পাসের ভেতরের হলে বা বাইরের মেসে গিয়ে ফ্রেশ হয়েই সব বন্ধুবান্ধব দল নিয়ে ছোটে সান্ধ্য ভ্রমণে! এই ঘোরাঘুরি বা আড্ডার বেশির ভাগই গিয়ে ঠেকে প্যারিস রোডে। প্যারিস যেন সবার মনে ভালোবাসার এক অদ্ভুত মায়া সৃষ্টি করে ফেলেছে! অথচ সেই প্যারিসের সঙ্গেই আজ আড়াই মাস ধরে আমাদের বিচ্ছেদ চলছে!


করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে নাকি আমরা প্যারিস রোডের দেখা পাব না! কিন্তু তার জন্য আরও কত অপেক্ষা করতে হবে আমাদের? এর উত্তর একমাত্র মহান প্রতিপালকই দিতে পারবেন। কিন্তু আমরা বন্ধুরা মেসেঞ্জারের ভিডিও কলে কথা বলেছি! তাদের সবাই চাইছে আবার একত্রে ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’, ‘বকুল ফুল, বকুল ফুল’, ‘আমার মাটিরও পিঞ্জিরার পোষা পাখিরে’, ‘আজ ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে’ প্রভৃতি গানগুলো গলা ফাটিয়ে গাইতে! মন খুলে গাওয়া গানের সঙ্গে আমাদের নিজস্ব নাচের ঢঙে হেঁটে বেড়াতে চাই ইবলিশ চত্বরের এপাশ থেকে ওপাশ! এক পড়ন্ত বিকেলে গগন শিরীষগাছের নিচে প্যারিস রোডের পিচে বসে আরেকটি গ্রুপ ছবি তুলে ফেসবুকের কভার ফটো আপলোড করতে চাই। প্যারিস রোডের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে চাই আবার। হে পৃথিবী! তুমি শান্ত হও। আমরা মতিহারের সবুজ চত্বরকে মিস করছি খুব। গৃহবন্দী জীবন আমাদের কাছে অসহ্য হয়ে উঠেছে। বন্দীজীবন ছেড়ে শহীদ মিনার, জোহা চত্বর বা প্যারিস রোডে যেতে মুখিয়ে আছে ৩৫ হাজার রাবিয়ান। তাদের স্বপ্নময় পদচারণে আবার মুখরিত হবে মতিহারের সবুজ চত্বর! দ্রুতই আমরা ফিরে যেতে পারব আমাদের প্রিয় ক্যাম্পাসে—এই প্রত্যাশায় কেটে যাচ্ছে দিনের পর দিন।



*শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়



[ad_2]

Source link
IRFAN H

Hi, This is IrfanH I love to travel and passing by gossip with friends.

Post a Comment

Please do not enter any spam link in the comment box

Previous Post Next Post